পদ্মায় ভাঙনে বিলীন দুই কি. মি. তীররক্ষা বাঁধ, ভেসে গেছে ৩৫ কোটি টাকার জিওব্যাগ

 প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ

পদ্মায় ভাঙনে বিলীন দুই কি. মি. তীররক্ষা বাঁধ, ভেসে গেছে ৩৫ কোটি টাকার জিওব্যাগ


শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা নদীর তীররক্ষা বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এতে ৩৫ কোটি টাকার বালুভর্তি জিওব্যাগ নদীতে ভেসে গেছে। গত এক মাসের ভাঙনে অন্তত ১৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী ভাটিতে গিয়ে মেঘনায় মিশেছে। নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের পর ভাটিতে পূর্ব নাওডোবা থেকে বিলাশপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত ভাঙন তীব্র আকার নেয়। ভাঙন ঠেকাতে ২০২৩ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৮৬০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে জাজিরা ইউনিয়নের পাথালিয়াকান্দি পর্যন্ত ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে জিরোপয়েন্ট থেকে কাথারিয়াকান্দি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। নদীর স্রোতে তীরের ভেতরে ১০ থেকে ১১০ মিটার পর্যন্ত ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ধীরগতিতে কাজ হওয়ায় বাঁধের এ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।



প্রকল্পটি ৩১টি গুচ্ছ প্যাকেজে ভাগ করে বিভিন্ন ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছর ১৭ মে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে জাজিরায় নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। গত এক মাসে জিরোপয়েন্ট থেকে কাথারিয়াকান্দি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। ঐ এলাকায় কাজ করা ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫ লাখ ২৪ হাজার জিওব্যাগ নদীতে ফেলেছিল যা ভাঙনের ফলে ভেসে গেছে। এসব জিওব্যাগের বিপরীতে তারা পাউবো থেকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বিল নিয়েছে। পুরো প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে ৩১০ কোটি টাকা বিল উত্তোলন করা হয়েছে।


মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) জাজিরার পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের পৈলান মোল্যাকান্দি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীর তীরের বাসিন্দারা নিজেদের বসতঘর খুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। জিরোপয়েন্ট থেকে পালেরচর বাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়ক ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। ঐ এলাকায় তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যবহৃত বালুভর্তি জিওব্যাগগুলোও ভাঙনের ফলে নদীতে ভেসে গেছে। তীরজুড়ে স্তূপ করে রাখা পাথরের ব্লকের অনেক অংশও নদীর স্রোতে তলিয়ে গেছে। আবু বকর আকনের (৬৫) বলেন, বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর স্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেল। ভাঙনে আমার এক বিঘা জমির ওপর থাকা বসত বাড়ি ও ৪ বিঘা ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। উঠানে ছাপরা ঘর করে থাকছি এখন। স্থানীয় কৃষক খলিল তালুকদার বলেন, বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু হারালাম। বাবা-মায়ের কবরও নদীতে চলে যাচ্ছে।পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, প্রকল্পের কিছু অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। ইতোমধ্যে সার্ভে শুরু হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে নতুন ডিজাইন অনুযায়ী সংশোধিতভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তখন কিছু ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে।


জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: