চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে অচলাবস্থা : দৈনিক শতাধিক অপারেশন, তিন সহস্রাধিক রোগীর চিকিৎসা বন্ধ
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন | জনদুর্ভোগ

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গতকাল রবিবার পর্যন্ত পাঁচ দিন চিকিৎসাসেবা বন্ধ। তালাবদ্ধ রয়েছে হাসপাতালে প্রবেশের প্রধান দুটি গেট। ভেতরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা রয়েছেন। দূর-দুরান্ত থেকে আসা রোগীরা গেট তালাবদ্ধ দেখে ফিরে যাচ্ছেন। কোনো কোনো রোগী আনসার সদস্যদের জিজ্ঞাসা করছেন, হাসপাতাল বন্ধ কেন? এত দূর থেকে আসছি, ঢাকায় থাকার জায়গা নেই, কোথায় যাব? উত্তরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা বলছেন, মারামারির কারণে হাসপাতাল বন্ধ। কখন সেবা কার্যক্রম চালু হবে বলতে পারব না। অন্য হাসপাতালে রোগী দেখান।
বহির্বিভাগে প্রতিদিন তিন সহস্রাধিক রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। শতাধিক রোগীর প্রতিদিন অপারেশন হয়। গত পাঁচ দিন ধরে বিপুলসংখ্যক রোগীর অপারেশন ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ।
গত ২৮ মে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কর্মচারী ও চিকিৎসাধীন জুলাই আন্দোলনে আহতদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর হাসপাতালে জরুরিসহ সকল ধরনের চিকিৎসা ও অপারেশন বন্ধ হয়েছে। ঐ দিন ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে চিকিৎসাধীন ও আগত রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। এই মারামারির ঘটনায় উভয়পক্ষের লোকজন আহত হয়েছে বলে জানা যায়। তবে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীসহ ১৫-২০ আহত হয়। জুলাই আন্দোলনে চিকিৎসাধীন ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা না হলে তারা কাজে যোগদান করবেন না বলে জানান।
গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা থেকে তাহমিনা খাতুন (৩৫) নামে এক রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। এক আনসার সদস্য তাকে জানান যে, হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ। অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ঐ রোগী বলেন, এতদূর থেকে আসলাম এবং ডাক্তার বলছে ঢাকার এই হাসপাতালে গেলে চোখের ভালো চিকিৎসা হবে। এ কারণে আসলাম। তাহমিনার স্বামী মারা গেছে। কোনো রকমে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন কোথায় থাকব। অন্য হাসপাতালে গিয়ে আমার পক্ষে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব না।’ তাহমিনার মতো বিপুলসংখ্যক রোগী চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এসে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিরসন করা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় আহত ৫৫ জন এবং মহিলাসহ ২০-২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে বলে এক কর্মকর্তা জানান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ফোন করলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।