পদ্মা-মেঘনায় দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ অপরাহ্ন | জনদুর্ভোগ

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় শুক্রবার মধ্য রাত অর্থাৎ ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস জাটকাসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় বিশেষ ভিজিএফ সহায়তা পাবেন জেলেরা। চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নিষিদ্ধ সময়ে জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে শুরু করে হাইমচর উপজেলার চর ভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ আহরণ বন্ধ থাকবে। দুই মাসের এই জাটকা সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, সদর ও হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদী উপকূলীয় এলাকায় সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সভা, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। সরেজমিন জেলে পল্লিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জেলে তাদের মাছ ধরার নৌকা ডাঙ্গায় উঠিয়ে রেখেছে। আবার অনেকে তাদের জালগুলো মেরামতের কাজ করছে। হরিণা ফেরিঘাট-সংলগ্ন মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, নানা কারণে নদীতে ইলিশের বিচরণ কমেছে। সবার সহযোগিতায় যদি জাটকা সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে কিছুটা হলেও ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জাটকা সংরক্ষণে পদ্মা- মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকা জেলেদের জন্য ইতিমধ্যে খাদ্য সহায়তা হিসেবে বরাদ্দকৃত চাল এসেছে।নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, জাটকা সংরক্ষণ চাঁদপুরের অভয়াশ্রম এলাকায় নৌ- পুলিশের প্রতিটি ইউনিট দিন ও রাতে কাজ করবে। কোনো জেলে আইন অমান্য করে জাটকা নিধন করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে আমরা জেলেদের সঙ্গে কথা বলে সতর্ক করে দিয়েছি।মতলব উত্তর (চাঁদপুর) সংবাদদাতা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর ৩০ কিলোমিটার অঞ্চলে আগামী দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। দুই মাস নিয়মিত উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান পরিচালনা করবে। এদিকে, অভয়াশ্রম বাস্তবায়নে নিবন্ধিত ৯ হাজার জেলেকে চার কিস্তিতে ১৬০ কেজি করে চাল করে চাল দেওয়া হবে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস জানান, জাটকা রক্ষায় জেলে পাড়াগুলোতে প্রচার-প্রচারণা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া তাদের জন্য নির্ধারিত বিজিএফএর চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। মা-জাটকা ইলিশ রক্ষায় অভিযান হবে কঠোর। অভয়াশ্রমে অসাধু জেলেরা যাতে কোনোভাবেই নদীতে নামতে না পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে মৎস্য বিভাগ।রামগতি (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, জাতীয় মাছ ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় ও ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধিতে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার নৌ- সীমাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে ঐ অভয়াশ্রম এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সকল প্রকার জাল ফেলা নিষিদ্ধের কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করা হয়েছে।সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের সদস্যসচিব সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শৌরভ-উজ-জামান জানান, মাছ ধরা বন্ধ থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারকে 'বিশেষ ভিজিএফ' সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় প্রত্যেক পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। চার মাস এই বিশেষ ভিজিএফ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মৎস্য সংরক্ষণ বিষয়ক উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, নিষিদ্ধ সময় জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঐ সময় পুনর্বাসনের আওতায় জেলেরা খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।