পর্যটন মৌসুম ঘিরে কক্সবাজারে চাঙ্গাভাব, সেন্টমার্টিনে প্রস্তুতি নেই

 প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৬ অপরাহ্ন   |   অর্থ ও বাণিজ্য

পর্যটন মৌসুম ঘিরে কক্সবাজারে চাঙ্গাভাব, সেন্টমার্টিনে প্রস্তুতি নেই

দরজায় কড়া নাড়ছে পর্যটন মৌসুম। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে এবারের পর্যটনের পথচলা। সেই লক্ষ্যে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস প্রস্তুতি শুরু করলেও দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে কোনো প্রস্তুতি নেই।এ পরিস্থিতিতে গেল বছর স্বল্প সময়ে সীমিত সংখ্যক পর্যটক পেয়ে জীবন ধারণের ব্যয় তুলতে না পারায় সামনের দিনে কি হবে এ নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন সেন্টমার্টিনের ব্যবসায়ীরা। 

দ্বীপের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস শুরু হলেই হোটেল-রিসোর্ট ও শুটকি-কাঁচা মাছ ব্যবসায়ীসহ পর্যটনসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার শুরু করে। কিন্তু গত মৌসুমে ক্ষতির মুখে পড়ায় এবারে হোটেল-রিসোর্ট সংস্কার কিংবা পর্যটকদের সেবায় কর্মকর্তা-কর্মচারী রাখা চূড়ান্ত করেনি। গত বছর পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ভরা পর্যটন মৌসুমে মাত্র দু’মাস পর্যটকরা দ্বীপে ভ্রমণে সুযোগ পান। তাও আবার দৈনিক দুহাজার করে। কিন্তু এখনও পযর্ন্ত সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী  জাহাজ চলাচল অথবা পর্যটকরা ভ্রমণে যাবে কিনা তা বা কি পরিমাণ পর্যটক এবার সেন্টমার্টিনে যেতে পারবে তা নিয়ে কোন বার্তা নেই কারো কাছে।

তারা আরও জানান, গত দু'দশক ধরে সেন্টমার্টিনের দু-তৃতীয়াংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসায় নির্ভরশীল হয়ে চলছে। পর্যটকরা দ্বীপে গেলে চার-পাঁচ মাসের আয় দিয়ে পুরো বছর তাদের ঘর-সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চলে। এটি মাথায় রেখে শুরু হতে যাওয়া পর্যটন মৌসুমে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকরা চার-পাঁচ মাস ও দিনে পাঁচ হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণে যাবার অনুমতি পেলে পর্যটন নির্ভর মানুষের দুঃখ দুর্দশা অনেকটা কেটে যাবে। 


সেন্টমার্টিন মারমেইড রিসোর্টের দায়িত্বশীল তৈয়ব উল্লাহ বলেন, প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের নানা ব্যস্ততার মধ্যে যায়। হোটেল রিসোর্ট সংস্কার, রঙ করা ও নানা প্রস্তুতিতে উৎসবের আমেজ থাকতো। এবার সেটা নেই।  অনিশ্চয়তা জেঁকে বসেছে সবার মাঝে। অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে নিজের চেয়ে বেশি যত্ন করা হোটেল রিসোর্টগুলো।


সেন্টমার্টিন হোটেল রিসোর্ট ওনার এসোসিয়েশন সভাপতি শিবলী আজম কোরেশি বলেন, কখন সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকরা আসবেন, পর্যটকবাহী জাহাজ কখন বা কোথায় থেকে চালু হবে, কি পরিমাণ পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণে আসতে পারে তার বিষয়ে এখনও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সরকারি বিধিনিষেধের কারণে গত বছর প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পেরেছে; সময় ছিলও দুমাস। এখনও কি সেটা বহাল আছে সে বিষয়ে কোনো কিছু জানা যায়নি।


ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, আমরা সরকারকে উদ্দেশ্য করো বলতে চাইবো সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন ৫ হাজার করে পরাপার সময় ৪-৫ মাস কররা কলে পর্যটকরা ভ্রমণে সুযোগ পাবে সে ব্যবস্থা চালু রাখলে পর্যটক নির্ভর দ্বীপের মানুষের দুঃখ দুর্দশা কেটে যাবে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছৈয়দ আলম মেম্বার বলেন, দ্বীপের দু-তৃতীয়াংশ মানুষ পর্যটক নির্ভর ব্যবসা বাণিজ্য ও কাজ কর্মের মাধ্যমে ৪-৫ মাস যা আয় হয় তা দিয়ে পুরো বছর তাদের বাড়ি-ঘরের সংসার চালাই। কিন্তু গত বছর যে দু’মাস পর্যটক এসেছে তা খুব সীমিত। এইবার হলেও যাতে ৪-৫ মাস পর্যটক দ্বীপে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করা হলে দ্বীপের মানুষের কষ্ট দূর হবে।

জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, আমি নতুন এসেছি। গত বছরের সিদ্ধান্ত মিডিয়ার মাধ্যমে অবগত হয়েছিলাম। কিন্তু এবারের সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। তবে, সিদ্ধান্ত না এলে গত বছরের মতোই পর্যটক পরিবহন হবে। আর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন ও পর্যটক সেবায় প্রস্তুত রয়েছে পর্যটনসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো।


অন্যদিকে, কক্সবাজারের পর্যটন জোনের কলাতলী ও আশপাশের কয়েকশ হোটেলে মৌসুমে আগত পর্যটকদের সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। তবে, ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর থেকে কক্সবাজারে সারাবছরই কমবেশি পর্যটক, উপস্থিতি রয়েছে। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক মৌসুমের জন্য নতুন করে তোড়জোড় নেই বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম। 


ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, এখন সারাবছরই নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে থাকে কক্সবাজার সৈকত। দিবারাত্রি সমানে বেলাভূমি ও পর্যটন এলাকায় পুলিশি টহল থাকে। বিশ্ব পর্যটন দিবস ও তার পরে নিরাপত্তাবলয় আরও জোরদার করে সবার আনন্দ ভ্রমণ নিশ্চিতে প্রচেষ্টা থাকবে।


কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সম্ভাবনার পর্যটন শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। অতীতের চেয়ে সামনের পর্যটন মৌসুম আরও আশান্বিত করবে বলে বিশ্বাস করে এগুচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবেশ সমুন্নত রেখে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পর্যটক সমাগম বাড়ুক। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সেবায় পর্যটন মৌসুম তার নিজস্ব স্বকীয়তা ফিরে পাবে সেটাই কাম্য। 


অর্থ ও বাণিজ্য এর আরও খবর: