করোনা আতঙ্কের সময়েও উপেক্ষিত ‘ব্যাংকার’
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২০, ০৩:২৩ অপরাহ্ন | জনদুর্ভোগ

মফিজুল হক:
বর্তমান সময় থমকে গেছে ‘করোনা’ আতঙ্কে। পৃথিবীবাসী যতটা আতঙ্কিত তার সিকিভাগও যদি সচেতন হতো তাহলে হয়ত এই অবস্থা দেখতে হতো না। বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশ, সামরিক অস্ত্র, আধুনিক চিকিৎসা কৌশল এই মহামারীর কাছে অসহায়। বাংলাদেশও এই আতংকে বাইরে নয়।
বাংলাদেশে প্রথম ‘করোনা’ সংক্রামিত মানুষ চিহ্নিত হওয়ার পর সরকার নড়েচড়ে বসে৷ তখন থেকেই সরকার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই মহামারী মোকাবিলা করার একটি কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটা ক্ষেত্রে সব দেশ যে ভুলটা করেছে, সেটা হলো এই ভাইরাসকে গুরুত্ব না-দেওয়া। সরকারি পর্যায় হতে শুরু করে সাধারণ জনগনের সচেতনতার অভাবের কারণে আজ বিশ্বজুড়ে ‘করোনা’ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন স্বাভাবিক জীবন ধারণ অক্ষুণ্ণ রেখে ভাইরাসের সংক্রমণ শক্তভাবে প্রতিহত করাই মূল কাজ। সারা বিশ্ব সেই দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার জনগনের জীবন মান ঠিক রেখে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ‘করোনা’ মোকাবিলা করার জন্য প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে। এই মহামারী মোকাবিলা করার জন্য দেশব্যাপী ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, র্যাবের সমন্বয়ে শক্তিশালী টিম গঠন করেছে। তাদের প্রত্যকের ঐকান্তিক চেষ্টায় প্রতিটা দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
জনগন উৎকণ্ঠিত। সরকার চিন্তিত। সংক্রামক রোগ বিধায় ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীরা প্রাথমিকভাবে পিছপা হলেও শেষ পর্যন্ত সবাই এই মহামারী বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক এই রোগ প্রতিরোধে প্রথম স্টেপ হচ্ছে ‘ঘরে থাকা’ অর্থাৎ সংক্রমণ ছড়ানো হতে বিরত থাকা। সরকারের নির্দেশনা মতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য এখন মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত রয়েছে৷
সরকারের ২৬ মার্চ হতে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে যাতে সবাই ঘরে থাকতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারে। সকলের সহযোগিতায় আশাকরি অতিদ্রুত বাংলাদেশ ‘করোনা’ মুক্ত হবে।
সবাইকে ছুটি দিলেও দেশের এক শ্রেনির পেশাজীবির জন্য সেই সাধারণ ছুটি কার্যকর হয়নি৷ ওদের জন্য অতিরিক্ত সাধারণ ছুটি কখনোই কার্যকর হয় না। ইদের আগের দিনও তাদের আগের মতোই কাজ চালিয়ে যেতে হয়৷ সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও ( শুক্র ও শনিবার, এমনকি অন্যান্য ছুটির দিন) নিয়মিতভাবে কাজ করে যেতে হয়৷
বরাবরের মতো এবারের সাধারণ ছুটিও ব্যাংকাররা ভোগ করতে পারছে না৷ কেননা, দেশ ও জাতির সেবা তাদের করতেই হবে৷ এখানে বলে রাখতে হবে যে, ‘করোনা’ ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি আছে ব্যাংকাররা। কেননা, সাধারণ গ্রাহকের সরাসরি যোগাযোগ হয় একমাত্র ব্যাংকারদের সাথে। অন্যদের ক্ষেত্রে যেখানে ভাইরাসকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয় সেখানে ব্যাংকাররা ভাইরাসকে আমন্ত্রণ জানায়। মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক চাহিদা মেটানোর জন্য এই পেশাজীবিরা সর্দা প্রস্তুত থাকে যেকোন সংকটে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা মহামারীর প্রাদুর্ভাব থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। দেশ ও জাতির সেবার প্রত্যয়ে তাদের ঐকান্তিকতার ফলে দেশের এই সেক্টর এখনো আগের মতোই সক্রিয়। সারা দেশের সকল পর্যায়ের মানুষের আর্থিক সেবা দিতে গিয়ে এখন নিজেরাই নানাবিধ ভোগান্তিতে জর্জরিত। ইতিমধ্যে কিছু ব্যাংকার সংক্রমিত হওয়ায় তাদের মধ্যে ‘করোনা’ আতংক প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সরকারি ঘোষনা মোতাবেক জরুরি কাজে নিয়োজিত যারা তাদের একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যারা এই সংকটকালীন সময়ে জনগনের সেবায় নিয়োজিত আছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হচ্ছে। কিন্তু যে পেশাজীবিরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে ভাইরাস সংক্রমণের আতুড়ঘরে কাজ করে যাচ্ছে তারা বরাবরের মতোই উপেক্ষিত।
যাদের হাত ধরে দেশের অর্থনীতির চাকা সক্রিয় তারা লক ডাউন চলাকালীন সময়ে রাস্তায় চলতে গিয়ে পড়ছেন নানাবিধ ভোগান্তিতে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সচেতন নজরদারির কবলে তাদের জীবনও সংকটে পর্যুদস্ত। তার উপর জীবনের মায়া ত্যাগ করে সেবা প্রদান করা সত্ত্বেও ‘সেবা দানকারী’ জরুরি তালিকা থেকে বাদ যাওয়ায় খুবই মর্মাহত।
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও জনস্বার্থে চলাচল ও গমনাগমন নিষেধাজ্ঞা অথবা নিয়ন্ত্রণ ও নিবৃত্তিমূলক যে কোন ব্যবস্থাকালে জরুরি সেবার তালিকায় ‘ব্যাংকিং’ না-থাকায় এই বৃহৎ অথচ উপেক্ষিত অংশের মনোবেদনা এখন চরমে। একদিকে যেমন জরুরি সেবায় অন্তর্ভুক্ত নয় অপরদিকে সাধারণ ছুটিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে এবং সংক্রমণের আশঙ্কায় বিচলিত এই জনগোষ্ঠীর দিকে সুনজর দিবেন বলে আশাকরি।
উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন বলে আশ্বস্ত হতে চায় সবাই।
(মফিজুল হক, ব্যাংকার ও কবি)