খালেদা জিয়ার চিকিৎসা : জাতিসংঘের চাওয়া ও বাংলাদেশের আইন
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০১:১০ অপরাহ্ন | আইন-আদালত-অপরাধ

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকারটার্ক খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যেন তিনি বিদেশে জরুরি চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন। গত ১ নভেম্বর তিনি এই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেছেন। তবে তিনি আইনী সকল অভিযোগ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রত্যাশা করছেন, নাকি বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেন দেওয়া হয় তার অনুমতি দিতে বলছেন, বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তবে দু’টির কোনোটিতেই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার নেই।
চিঠিতে যা আছে :
•আমি তাঁকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আপনার (শেখ হাসিনা) সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই; যাতে তিনি দেশের বাইরে জরুরি ও বিশেষ চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন।
•খালেদা জিয়ার মুক্তি দুইপক্ষের রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের রেজোল্যুশন কী বলে? "
•মানবাধিকার পরিষদের ২০১৫ সালের “মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন” শিরোনামের রেজোল্যুশনে আছে, “মানবাধিকার পরিষদ আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর জোর দেয়।“
•২০০৭ সালে বাংলাদেশের নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ পৃথক হয়ে যায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বাংলাদেশে বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপের এখতিয়ার নেই
•জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
•সরকার নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়।
•ছয় মাস পরপর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।
•সাজাপ্রাপ্ত আসামির যদি চিকিৎসার জন্য দেশত্যাগ করতে হয়, সেক্ষেত্রে আদালতের কাছে অনুমতি নিতে হবে।
•তা করতে হলে সাজার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে, জেলে যেতে হবে এবং কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে।
•এখানে নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
•প্রধানমন্ত্রী নিজের ক্ষমতাবলে সাজা স্থগিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। এর বেশি তাঁর এখতিয়ারে নেই।
•একটি উপায় হচ্ছে আইনের পরিবর্তন। কিন্তু সেজন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত প্রয়োজন। নির্বাচনের আগে যেহেতু আর সংসদ অধিবেশননেই, সুতরাং সেই সুযোগটিও নেই।
দণ্ড মওকুফের সাংবিধানিক অধিকার কেবল রাষ্ট্রপতির "
•বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে−কোনদণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে−কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।“
•সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নন, রাষ্ট্রপতির কাছে দণ্ড মওকুফ ও মুক্তির জন্য আবেদন করা উচিত।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিতে যে আহ্বান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিএনপিচে য়ারপারসনের সাজায় হস্তক্ষেপ করার সে ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর নেই। আর জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ তাদের রেজোল্যুশনে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যকলাপ রেজোল্যুশন পরিপন্থী।