বাজারে মিলছে মৌসুমি ফল জাম্বুরা, বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

 প্রকাশ: ২৩ অগাস্ট ২০২৩, ১২:০৪ অপরাহ্ন   |   ভিন্ন খবর

বাজারে মিলছে মৌসুমি ফল জাম্বুরা, বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

জাম্বুরার ইংরেজি নাম পোমেলো এবং বৈজ্ঞানিক নাম সাইট্রাস ম্যাক্সিমা বা সাইট্রাস গ্র্যান্ডিস। বিভিন্ন ভাষায় এই ফল তুরুনজা, পমেলো, জাবং, শ্যাডক ইত্যাদি নামে পরিচিত।



কাঁচা ফলের বাইরের দিকটা সবুজ এবং পাকলে হালকা সবুজ বা হলুদ রঙের হয়। এর ভেতরের কোয়াগুলো সাদা বা গোলাপী রঙের।

খোসা পুরু ও খোসার ভিতরের দিকটা ফোমের মতো নরম। ওষুধি গুনাগুণ থাকায় এ ফলের কদর রয়েছে বেশ। মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে আসতে শুরু করেছে জাম্বুরা। তবে অতিরিক্ত দামের কারণে এখনো জমে ওঠেনি বাজার।  

চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে আসা এসব জাম্বুরা আকারে যেমন বড়, তেমনি স্বাদে আছে টক-মিষ্টির সংমিশ্রণ।


নগরের ফলমন্ডি, ফিরিঙ্গি বাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে প্রতি ১০০ জাম্বুরা বিক্রি হয় ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতিটি বড় সাইজের জাম্বুরা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ছোট সাইজের জাম্বুরা প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা।  


মৌসুম শুরু হলেও এখনো বেচা-বিক্রি জমে উঠেনি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দামও একটু বেশি- বলছেন বিক্রেতারা।  


নগরের ফিরিঙ্গি বাজারের আড়তদার মোহাম্মদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যে দামে কিনে এনেছি, সে দামেও বিক্রি করতে পারছি না। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকের খরচ সহ সব ধরনের খরচও বেড়েছে।  


তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকা থেকে এসব জাম্বুরা আসে। একগাড়ি জাম্বুরা আনতে অনেক প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়। মৌসুমি ফল হলেও এটি সংরক্ষণে ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের দামের সমন্বয় করতে হয়।


কাজীর দেউড়ি কাঁচা বাজারের ফল ব্যবসায়ী নুর আলম বাংলানিউজকে বলেন, মৌসুমি ফল জাম্বুরা মাত্র বাজারে আসতে শুরু করেছে। স্বাদ ও সাইজের কারণে দামের পার্থক্য রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের জাম্বুরা স্বাদে কিছুটা টক। অন্যদিকে সিলেটের জাম্বুরা স্বাদে মিষ্টি। তাই সিলেটের জাম্বুরার দাম কিছুটা বেশি। এছাড়া সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়া পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই প্রতিটি জাম্বুরার দাম আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।  


পুষ্টিবিদদের মতে, খাবারের রুচি বাড়াতে জাম্বুরা বেশ কার্যকর। পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় ত্বকের জন্যও উপকারী। এছাড়া পাকস্থলীর সমস্যায়, ওজন কমাতে, গরম-ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায়, চর্মরোগে এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্য জাম্বুরা উপকারী। জাম্বুরায় থাকা ভিটামিন সি রক্তনালির সংকোচন-প্রসারণের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। শিরা-উপশিরায় চর্বি জমতে বাধা দেয়।


একসময় গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই থাকতো জাম্বুরা গাছ। ব্যাপকহারে বৃক্ষনিধনের ফলে এসব উপকারী ফলগাছও কাটা পড়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাম্বুরার ফলন হচ্ছে বেশি। সেখান থেকেই পাইকারি দরে ট্রাকবোঝাই করে জাম্বুরা নিয়ে আসা হয় শহরে।  


রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অন্যান্য ফলের পাশাপাশি মিশ্র ফল হিসেবে জাম্বুরা চাষ করায় অধিক লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রাঙামাটির ১০ উপজেলার মধ্যে সদর, লংগদু, বরকল, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় জাম্বুরার চাষ বেশি হচ্ছে।


খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, দীঘিনালা ও মানিকছড়িতে জাম্বুরার উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়া বান্দরবানের চেমি ডলুপাড়া ও লাপাইমুখ গ্রামে জাম্বুরার আবাদ বেড়েছে। জেলা শহরের বালাঘাটার লেমুঝিরি আগা পাড়ায় ফলদ গাছগুলোর বেশিরভাগই জাম্বুরা গাছ। প্রতিবছর গড়ে ৩০-৪০ একর জমিতে জাম্বুরার চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।



ভিন্ন খবর এর আরও খবর: