ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক দুর্নীতি ও কালোবাজারি

 প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:৫২ অপরাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ

ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক দুর্নীতি ও কালোবাজারি


অনলাইনে ট্রেনের টিকিট প্রায় সময় পাওয়া যায় এবং এটা বাংলাদেশ রেলওয়ে ও আমদের জন্য ভালো একটা দিক । অন্যদিকে কাউন্টার গুলোতে প্রায় সময় টিকিট পাওয়া যায় না । বেশির ভাগ টিকিট চলে যায় কালোবাজারিদের হাতে এবং এটা এখন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ঢাকার বাইরের কাউন্টার গুলোতে।  অফিসের কাজে গত দুই মাসে আমি পাবনার চাট্মোহর , সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া , জামাল্পুর বাজার , জামালপুর মেলান্দহ , ভৈরব বাজার স্টেশন দিয়ে ভ্রমণ করেছি। ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় টিকিট সব সময় অনলাইনেই পেয়েছি, কিন্তু রিটার্ন টিকিট না অনলাইনে ছিল , না কাউন্টার গুলোতে।


আবার মজার ব্যাপার হচ্ছে কাউন্টারের ঠিক দুই হাত দুরেই দালালেরা টিকিট লাগবে নাকি বলে হাতছানি দিচ্ছে । শুধু তাই নয় তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকিট আছে , তারা বুক ফুলিয়ে কাউন্টারের সামনেই টিকিট বিক্রি করছে , কাউন্টারের লোকদের সাথে রয়েছে তাদের চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক। টিকিটের কমিশনের টাকা যদি তারা ভাগ নাই পায় তাহলে এত টিকিট দালালেরা পায় কিভাবে ? আর ওপেনে টিকিট বিক্রি করার সাহস পায় কোথায়? দেখার মত কেউ নেই । এই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি দেখেছি   জামাল্পুর বাজার , মেলান্দহ  ও  ভৈরব বাজারে। ভৈরব বাজার থেকে ঢাকা শোভন চেয়ারের ভাড়া ১০৫ টাকা একটা ট্রেনে , সেখান থেকে দালালেরা রাখে ২৫০ টাকা । ১ টাকাও কম হবে না সাফ জানিয়ে দিল ,একটা ছোট হিসাব দেই , প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে যদি ২০০ টিকিট বিক্রি করে আর ১৫০ টাকা করে বেশি নেয় তাহলে প্রতিদিন তাদের ইনকাম ৩০ হাজার টাকা মাসে সংখ্যাটা দাড়ায় ৯ লক্ষ্য টাকা!!! একটু খেয়াল করেছেন কত টাকা ? আর এর ভাগ পায় কে কে ?  কাউন্টারের আশে পাশে অসংখ্য সঙ্গবদ্ধ দালাল চক্র  প্রচুর টিকিট নিয়ে ঘোরাঘোড়ি করছে । আপনি ষ্টেশনে ঊঠার আগেই কয়েকদফা তাদের কাছ থেকে অফার পাবেন


"টিকিট লাগবে নাকি " বলে। একই দৃশ্য আমি বেশ কয়েক জায়গায় দেখেছি , সরেজমিনে দেখতে পারেন , জামালপুর , ভৈরব সহ অন্যান্য ষ্টেশনে যারা যাতায়াত করেন তারা সবাই এ ধরনের অভিজ্ঞতার সাক্ষী দেবে।  ভৈরব বাজার ষ্টেশনে আমি লক্ষ করেছি বড় ধরনের সিসি ক্যামেরা আছে , কিন্তু এর  প্রয়োগ কতটুকূ বা কেন আছে আমি জানিনা। একজন সাধারণ সচেতন  নাগরিক হয়ে আমি ফোন করেছিলাম দুদকের হেল্পলাইন নাম্বার ১০৬ এ । বেশ কয়েকবার ফোন করার পর রিসিভ হয় , ভাবলাম একটা সমাধান হবে, অপরপ্রান্তের ভদ্রলোক সাফ জানিয়ে দিলেন লিখিত অভিযোগ দিতে।


লিখিত অভিযোগ করার প্রয়োজন হলে , হেল্পলাইন টোল ফ্রি নাম্বার রেখে লাভ কি ??  একটি  স্বাধীন দেশে প্রকাশ্যে এমন দুর্নীতির চিত্র আমরা নতুন প্রজন্ম মেনে নিতে পারি না। এ সকল দালালদের ও তাদের সহযোগিদের কালো হাত বন্ধ করে দিলে , টিকিটের সঙ্কট আর থাকে না , যে কেউই যে কোন সময় টিকিট পাবে বলে আমি মনে করি । একদিকে বাড়বে রেলওয়ের অর্থনীতি


অন্যদিকে মানুষও পাবে শান্তি। এই কুচক্রি মহলের বিরুদ্ধ্যে শুদ্ধি অভিযান খুবই জরুরি ,এটা এখন সময়ের দাবি । আশা করি সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ হবে । বাড়বে রেলের সেবা । না হলে অনলাইনে টিকিট করে , ডিজিটাল বাংলাদেশ করে আমরা কি করব , যদি একটি মহলের কাছেই থাকে সব টিকিট ? নতুন  রেলওয়ে মন্ত্রী মহোদয় আসার পরে অনেক উল্লেখ্যযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে , আশা করি এই সমস্যার ও সমাধান হবে। আর আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে, দালাল  থেকে দূরে থাকতে হবে ।  তাহলেই মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে রেল ভ্রমণ করতে পারবে । সবার জন্য শুভ কামনা




(মোঃ আব্দুস সাত্তার- লেখক , গবেষক ও আইটি বিশেষজ্ঞ)

জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: