ম্যাজিস্ট্রেটকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ বলে হেনস্তার অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১২:২০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রেখে মাঠে গরুর হাট বসিয়েছেন এক ইজারাদার। পরে সেই মাঠ থেকে হাট অপসারণ করতে গেলে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটকে ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যা দিয়ে হেনেস্তার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা মো. আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে। সবশেষ সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেয় ওই যুবদল নেতা। হেনস্তার শিকার ম্যাসিস্ট্রেটে হলেন মুহাম্মদ ফয়সাল আল নুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) । অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি। তিনি দোল্লাই-নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন একটি পশুর হাট পরিচালনা করেন। মূলত ওই বাজারটি ইজারা নেওয়া হলেও বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাটের বেচাকেনার অভিযোগে এই অভিযানে নামে প্রশাসন।
সহকারী কমিশনার ফয়সাল আল নুর বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বিদ্যালয় মাঠে গরুর বাজার বসানো হয়। আমরা অভিযানে গেলে বাজার পরিচালনাকারী ও ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি আক্তারুজ্জামানের উসকানিতে তার লোকজন সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেন। তারা কাজে বাধা দিয়ে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে তারা ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন।’ প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে দোল্লাই-নবাবপুর পশুর হাটে গিয়ে বিদ্যালয় মাঠ থেকে হাট সরানোর কথা বলতেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে (ফয়সাল আল নুর) ‘আওয়ামী লীগের দালাল, ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে ‘ধর, ধর’ বলেন একদল লোক। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্য ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেট দোল্লাই-নবাবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অবস্থান নেন। সবশেষ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তখন ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন বাজার পরিচালনাকারী ও দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান।
আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাজারটি আমি পরিচালনা করলেও ইজারা নেওয়া হয়েছে আমাদের ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাজু ভাইয়ের নামে। বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ফয়সাল আল নুর এসে আমাকে কথা বলার জন্য ডাক দেন। আমি সামনে গেলে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলতে থাকেন। তখন আমি বলেছি, আপনার কাজ আপনি করেন, আমি আপনার কথা শুনতে পারব না। এ কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি আমাকে পুলিশ দিয়ে আটকের চেষ্টা করেন। তখন ৪০০-৫০০ লোক জড়ো হয়ে যায়। পরে তিনি ভূমি অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর আমাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সেনাবাহিনী এসে বিষয়টি মিলমিশ করিয়ে দিয়েছে।’
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর বাজার অপসারণের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। এ সময় ইজারাদারের লোকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। পরে সেনাবাহিনীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ইজারাদার ক্ষমা প্রার্থনা করে মুচলেকা দিয়েছেন। বিদ্যালয় মাঠে আবার পশুর হাট বসানো হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।