মাথাপিছু আয় বাড়লেও ছোট হচ্ছে বাজারের ফর্দ
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ০৫:১৮ অপরাহ্ন | সম্পাদকীয়
(এহছান খান পাঠান)
দেশে নিঃসন্দেহে প্রচুর অবকাঠামোগত উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু দেশের মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বা মানসিকতার তেমন কোনোই উন্নতি ঘটছে না। শিক্ষাসহ সংস্কৃতির মান অধোগামী। বেকারত্ব বাড়ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে, কিশোর গ্যাংসহ মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে।
প্রতারণা করে সফল হওয়ার চেয়ে সম্মানের সাথে ব্যর্থ হওয়া ভাল। এমন ভাবনা থেকে অনেকেই সৎপথে দুটি টাকা আয় করে সম্মানজনকভাবে বাঁচবে বলে সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করে, কিন্তু দিনে দিনে বাড়ছে প্রতারণা করে সফল হওয়া মানুষের সংখ্যা।
রাত-দিন মাথায় বাজারের ফর্দ, দ্রব্যমূল্য ও পরিবারে অর্থের যোগান এসবই ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণের। মানুষ সবচাইতে বেশি বিপন্নবোধ করেন খাদ্যের দাম বেড়ে গেলে। বাজারে পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে বাড়ছে না আয়। টানা ২৪ মাস ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম। একদিকে, মাথাপিছু আয় সামান্য বাড়ছে, অন্যদিকে, মানুষের বাজারের ফর্দ দিনে দিনে ছোট হচ্ছে। এ এক অদ্ভূত হিসাব-নিকাশ। অগণিত মানুষের জীবনের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, শান্তি ও টনাপোড়েনের কোনো হিসাব থাকে না। জিডিপি দিয়ে এগুলো নির্ণয় করা হয় না।
আয় বৈষম্য বাংলাদেশে ক্রমাগত বাড়ছে। কিছু মানুষের হাতে এত টাকা যে, দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে ২০২২ সালে ৫৩২ জন বাংলাদেশি বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন। দেশের মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পেরেশান, ঠিক তখন এ রকম খবর এসেছে। দেশের কোনো কোনো মানুষ কী পরিমাণ কালো টাকার মালিক হলে দুবাইতে গিয়ে বাড়িঘর কেনেন, সুইস ব্যাংকে টাকা রাখেন, কানাডায় বেগমপাড়া বানান, তা বোঝাই যাচ্ছে।
অন্যদিকে, অসংখ্য মানুষের হাতে প্রতিদিনের সংসার চালানোর টাকা নেই। খোলাবাজারে টিসিবির ট্রাক থেকে কম দামে পণ্য কিনতে মানুষের লম্বা লাইন ও সেখানে মধ্যবিত্তের ভিড় বাড়ছে। বাজারে মাছ না কিনে মাছের কাঁটা কেনার লোক বাড়ছে।
(এহছান খান পাঠান, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক অর্থনীতির কাগজ)