বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জন্মদিন আজ
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ১০:২১ অপরাহ্ন | জন্মদিন
শামসুল কাদির মিছবাহ (সুনামগঞ্জ):
অসংখ্য জনপ্রিয় বাউল গান ও গণসংগীতের রচয়িতা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জন্মদিন আজ। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি দিরাই উপজেলার ধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম শৈশব থেকে সঙ্গীত সাধনা শুরু করেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত জীবনে একতারা ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে/আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না/আমি কূলহারা কলঙ্কিনী/কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া, কোন মেস্তরি নাও বানাইছে/কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু/বসন্ত বাতাসে সইগো/মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও, আমি বাংলা মায়ের ছেলেসহ অসংখ্য কালজয়ী গানের রচয়িতা এই গানের সম্রাট।
বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নেন কমর উদ্দিন, সাধক রসিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহিম মোস্তান বকস’র কাছ থেকে।
২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ভাটি অঞ্চলের এই গুণি মানুষ। মৃত্যুর পর সর্বস্তরের মানুষের কাছে তাঁর প্রচার, প্রসার ও হৃদয় ছোঁয়া গানগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ভাটি অঞ্চলের সুখদুঃখ তুলে এনেছেন গানে। নারী-পুরুষের হৃদয়ের কথা প্রকাশ করেছেন আকর্ষণীয় সুরে। গানে ফুটে উঠেছে ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসার কথা। পাশাপাশি সমাজের অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও গান রচনা করেছেন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, কাগমারী সম্মেলন, ভাষার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মানুষকে প্রেরণা যোগায় শাহ আবদুল করিমের গান। গানের জন্য মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি। শাহ আবদুল করিম লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন ১৬শ'র বেশি গানে। যেগুলো সাতটি বইয়ে গ্রন্থিত আছে। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তার ১ টি গান ইংরেজীতে অনুদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পূর্বে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি বাংলাদেশসহ বাংলাভাষি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননার পাশাপাশি পেয়েছেন একুশে পদক। কিংবদন্তি এই বাউল সম্রাট সশরীরে না থাকলেও তাঁর গান ও সুরের ধারায় ভক্ত-আশেকানের হৃদয়ে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।