আজ আমার জন্মদিন

 প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন   |   জন্মদিন

আজ আমার জন্মদিন

হায়দার হোসেন:  

নিজের একান্ত কিছু ভাবনা আপনাদের সাথে বিনিময় করার ভালো একটা উপলক্ষ পেয়ে গেলাম। আমার কাছে জন্মদিন মানে জীবন থেকে আরও একটি বছর ঝরে যাওয়া। সোজা কথায় মৃত্যুর আরো কাছে পৌঁছানো। সেই হিসেবে দিনটি আনন্দের চাইতে বরং বেদনারই হবার কথা।

আমরা মানুষ বড়ই অদ্ভূত। হয়তো সেই বেদনা থেকে কিছুটা সময়ের জন্য আড়াল করতেই জন্মদিনে হৈ- হুল্লোর করে সানন্দে ভুলে থাকি, আহা জীবন এত ছোট! সত্যি সত্যিই  মৃত্যুর আরো কাছাকাছি চলে এলাম!

বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা। পৃথিবীতে আমি অসম্ভব সুখি একজন মানুষ। আলহামদুলিল্লাহ। স্রষ্টা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। লটারি টিকিটে নয়।

আমার জীবন বদলেছে কঠোর পরিশ্রমের কারনেই। সঙ্গে ছিল মানুষের প্রতি আমার মানবতা, আদর্শ,ভালোবাসা, বিশ্বাস, ক্ষমা, সততা।

এজন্যে মা-বাবার দোয়া, আপনাদের ভালোবাসা সর্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।

মহান আল্লাহ আমাকে যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছেন নিশ্চিত ভাবে তার সবটুকুর যোগ্য আমি ছিলাম না। জীবনে যখন যেখানে অপ্রাপ্তি কষ্ট যন্ত্রণা আর হতাশা এসেছে সেগুলো কেউ জীবনের অংশ মনে করেই হেসেখেলে গ্রহণ করেছি। যা কখনো অ সুখী হতে দেয়নি।

বয়স বাড়ছে। ইদানিং মৃত্যু চিন্তাটাও চারপাশে ঘুরঘুর করছে। মনে হয় এই বুঝি মৃত্যুদূত এসে বলছে, অনেক তো হলো এবার চলো আমাদের সাথে।

সত্যি করে বলছি, আমার মৃত্যু প্রতীক্ষাও যেন সকল মুহূর্তের।

আমার জন্ম সার্থক। দুঃখ, কষ্ট, আঘাত, প্রতারণা, মায়া,মমতার মিশে সার্থক আমার এই বেঁচে থাকা।

আমি প্রচন্ড রকমের এক নির্বিবাদী মানুষ। কেবলমাত্র আদর্শ আর সৎ সাংবাদিকতার কারণে গত চার দশকে পেশাগত জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেকেই আমার প্রতিপক্ষ হয়েছেন, হচ্ছেন।

তাদের শাপ-শাপান্তে কখনো মনে হয়েছে, চারপাশের বিষময় বাতাসে আমার নিঃশ্বাস ক্রমশ: সরু হয়ে আসছে। আমি বিলীন হয়ে যাচ্ছি।

সেখান থেকে আবার আমার উত্তরণ ঘটে। ঝাঁপিয়ে পড়ি নতুন উদ্যোমে। বেঁচে থাকার নতুন আনন্দে।

সম্পূর্ণ অকারণে কেবলমাত্র স্বার্থে, দ্বন্দ্বে কিংবা পেশাগত কারণে যারা আমাকে ভীষণ প্রতিপক্ষ মনে করেছেন। আমার ক্ষতির জন্য সর্বদায় নিজেকে উত্তরণে আত্মনিয়োগ না করে আমার অনিষ্ট সাধনে এক পা এগিয়ে থেকেছেন। কৃতজ্ঞতা আপনাদের প্রতিও।

আজ এই সুযোগে সকাতরে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

বিনম্র শ্রদ্ধায় ক্ষমা চাচ্ছি আপনাদের কাছেও। যারা অকারনে আমাকে ভালোবেসেছেন। আমার জীবন টাকে পরিপূর্ণ করেছেন। মৃত্যুর আগে এ ঋণ শোধ হবার নয় বলেই এই ক্ষমা প্রার্থনা।

প্রচন্ড অভা‌বেরর ম‌ধ্যে বড় সন্তান‌কে বড় ক‌রে‌ছি । তার ছোট বেলায় আমার প্রচন্ড চেস্টা থাকার প‌রেও তার কা‌ঙ্খিত আশ‌াপিুরণ কর‌তে পা‌রি‌নি। সৃ‌ষ্টিকর্তা যখন দৈন‌্যতা ঘু‌চি‌য়ে‌ছেন তখন ছে‌লে এবং মে‌য়ে র প্রয়োজন এবং চা‌হিদা মত সবই দেওয়ার চেষ্ট কর‌ছি ।

জীবনের এ প্রা‌ন্তে এস‌ে  আমি খুবই স্বার্থপর হ‌য়ে‌ছি । ছে‌লে বৌমা, মে‌য়ে জামাই, খুবই দুঃসম‌য়ের ভরসা অ‌নেক অভাব যখন চা‌রি‌দি‌কে তখন প্রিয় স্ত্রী, যি‌নি সকল প্রকার সুখ ত‌্যাগ ক‌রে আমার শুণ‌্য হাত ধ‌রে‌ছিল । প্রিয় ভাই বোন, স্বজন, বন্ধু বান্ধব, শ্রদ্ধাভাজন, প্রিয়জন, কিংবা যারা আমা‌কে পছন্দ বা অপছন্দ ক‌রেন ‌কিংবা শত্রুতা ক‌রেন। আ‌মি কা‌রোই খোজ খবর নেই না ।

আমার খোজ নেয়ার কা‌রো দরকার হ‌লে করুক। নয়‌তো না করুক । কর‌লে খুশী, না কর‌লে ম‌নে ক‌রি আমার খোজ খবর নেয়ার  প্রয়োজনীয় মানুষটা হ‌তে পা‌রি‌নি । না স্রেফ কথা কোন ক্ষোভ নেই । নেই ই ।

ভাল থাকবেন সবাই। জীবনের সূর্যাস্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গনে আরো এক ধাপ এগিয়ে থাকার এই শুভ যাত্রায় আপনাদের সকলের জন্য আমার দোয়া, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও মমতা।

(জন্মদিন উপলক্ষে স্বনামধন্য সাংবাদিক হায়দার হোসেন এর দেয়া ফেসবুক স্টাটাস থেকে নেয়া)