‘স্বৈরাচারের দোসর’ সচিব-ম্যাজিস্ট্রেটদের তালিকা দিলো জুলাই ঐক্য

 প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ০৫:০৮ অপরাহ্ন   |   জাতীয়

‘স্বৈরাচারের দোসর’ সচিব-ম্যাজিস্ট্রেটদের তালিকা দিলো জুলাই ঐক্য


আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও তাদের দোসর হয়ে প্রশাসনে অনেকেই কাজ করছেন- এমন দাবি করেছে জুলাই ঐক্য। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা এই প্ল্যাটফর্ম আওয়ামী লীগ দোসর হিসেবে ৪৪ জন সচিব এবং ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রশাসনের এসব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে জুলাই ঐক্য।

মঙ্গলবার (২০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান। প্রধান উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে এই তালিকা তুলে দেওয়া হবে বলেও জানায় জুলাই ঐক্য। এ বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নেয় সে অনুযায়ী পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানান তারা।


জুলাই আন্দোলনে শহীদ মুনতাছির রহমান আরিফের বাবা গাজিউর রহমান তালিকা প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলে ফ্যাসিবাদীর বিলুপ্তি চেয়েছিল। চেয়েছিলাম একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, দেশ ভালো চলবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকে যারা ইন্ধন দিয়েছে তারা এখনো বহাল তবিয়তে। আমরা যে মামলা করেছি তার একজন অপরাধীকেও ধরা হয়নি। না ধরলে বিচার কীভাবে হবে। উলটো আমাদের হুমকি দিচ্ছে।

তিনি বলেন, যারা হত্যা করেছে তারাই আবার এ ঘটনার তদন্ত করছে। তাহলে কীভাবে সত্য উদঘাটন হবে? কীভাবেই বিচার হবে? আমরা জানি এখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা বহাল রয়েছেন।


জুলাই ঐক্যের নেতা প্লাবন তারিক বলেন, আওয়ামী লীগের সময় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এসব সচিবরা। আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ দিয়ে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছে।


তিনি বলেন, একজন সচিব একসময় সাতক্ষীরার ডিসি ছিলেন, তার নির্দেশে অনেক মানুষের বাড়িঘর ভেঙেছে। তিনি আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক। তারা কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন।


সংবাদ সম্মেলনে ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপরে গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তালিকা প্রকাশ করে আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ফ্যাসিবাদে সিস্টেম দাঁড় করাতে সব ক্ষেত্রের কর্মকর্তাদের দরকার হয়। তাদের তালিকা আমরা প্রকাশ করেছি। আমরা ঝুঁকি নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করছি। জুলাই আন্দোলনকে ব্যর্থ হতে দেবো না।


এ সময় সরকারের কাছে কিছু দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো-

১. আগামী ৩১ মে’র মধ্যে তালিকায় থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হবে।

২. তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি দেশের জনগণকে দেখাতে হবে।

৩. দেশের তথ্য পাচারকারী, ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানো, নির্দেশকারী এবং সহযোগিতাকারী সব আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিবারসহ সবার ব্যাংক হিসাব ও অবৈধ সম্পদ জব্দ করতে হবে।

৪. স্বৈরাচারের দোসর আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।


৫. আগামী ৩৬শে জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত সব স্বৈরাচারের দোসরদের শ্বেতপত্র সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

৬. আইনের ১৩২ ধারার কারণে থানায় খুনি পুলিশদের নামে মামলা নেওয়া হয় না। আগামী ৩১ মে’র মধ্যে এই ধারা বাতিল অথবা সংশোধন করতে হবে।

৭. আগামী ৩১ মে’র মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তারা এখন কোথায় আছেন এবং কতজন কার সহযোগিতায় দেশ ছেড়েছেন তাদের তালিকাও প্রকাশ করতে হবে।

এর আগে গত ১০ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিকে সামনে রেখে গত ৬ মে ৩৫টি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে জুলাই ঐক্যের আত্মপ্রকাশ হয়। বর্তমান ৮০টি সংগঠন জুলাই ঐক্যের শক্তি।



জাতীয় এর আরও খবর: