স্বেচ্ছায় রক্ত দান করলেন নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন | ভিন্ন খবর

মুমূর্ষের সেবায় স্বেচ্ছায় রক্ত দান করলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়েজ এন্ড গার্লস লাউঞ্জে মহিলা-পুরুষ আলাদা দুই ভেন্যুতে দিনব্যাপী স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের সহযোগিতা ও জুলাই বিপ্লবী যুব সংগঠনের আয়োজনে রক্ত সংগ্রহ বিষয়ক সহায়তা করে স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।
বি পজেটিভ গ্রুপের আল শাহরিয়ার রশিদ (২৬) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন। এবারের কর্মসূচিতে তিনি রক্ত দান করলেন। এটি তার ১০তম বারের দান। শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে অসুস্থ আত্মীয়ের প্রয়োজনে। এখন অন্যান্যদের প্রয়োজনেও নিয়মিত রক্ত দান করে যাচ্ছেন। রশিদ বলেন, 'আত্মীয়ের দুঃসময়ে রক্তের গুরুত্ব আমি নিজেই দেখেছি। তাই অন্যের প্রয়োজনে গ্রহীতাকে দেখি বা না দেখি দান করে যাই নিয়মিত।'
ইসিই বিভাগের ছাত্র সাজিদ হোসেন (২১) জীবনে প্রথমবার রক্ত দিলেন। তার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। তিনি জানান, 'পরিচিতজন অনেকেই রক্ত দান করেন। তাদের দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়েছি। পরিবার থেকেও কোনো বাধা নেই বরং তারাও উৎসাহিত করেছেন। প্রথমবার রক্ত দিয়ে খুবই ভালো লাগল। রক্ত দেয়ার এই আনন্দটা সবাইকে জানাতে হবে। তাহলেই সবাই মহৎ এ কাজে এগিয়ে আসবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রক্তদান কর্মসূচির এমন আয়োজনকে সুযোগ হিসেবে মনে করছেন বিবিএ শিক্ষার্থী সাইমুনা আক্তার সোমা। তার রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ। রক্ত দান করে তিনি বলেন, 'অনেক সময় হুটহাট বাইরে কোথাও গিয়ে জরুরি রক্ত দিতে পারি না। ক্যাম্পাসে এমন আয়োজন আমার জন্যে চমৎকার সুযোগ। আর রক্ত দিতে আমার ভালো লাগে। এটি অনেক বড় মানব সেবা।'
২২ বছর বয়সী আশরাফুর রহমানের রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ। নর্থ সাউথের এই আয়োজনে তিনিও রক্ত দান করেছেন। এটি তার ৪র্থতম দান। তার মতে, রক্ত দান করলে রক্তগ্রহীতা যেমন উপকার পান তেমনি রক্তদাতাও শারীরিকভাবে উপকৃত হন। রক্তদানের এই ইতিবাচকতা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই রক্ত চাহিদা মেটাতে দানের প্রবণতা বেড়ে যাবে।
প্রতি বছরই স্বেচ্ছা রক্তদানের এমন আয়োজন করা হয় নর্থ সাউথে। এ বিষয়ে সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্ত জানান, 'আমরা নিয়মিত এমন আয়োজন করে থাকি। এক-দুদিনের ক্যাম্প ছাড়াও আমাদের প্রায় ৩-৪ হাজার ডেটা রয়েছে। যেখান থেকে ডোনাররা বিভিন্ন সময়ে নিয়মিত রক্ত দান করে থাকেন। শান্ত আরো জানান, ব্লাড ক্যাম্পের মাধ্যমে যারাই রক্ত দান করেন তাদেরকে আমরা একটি করে সার্টিফিকেট দিচ্ছি। এছাড়া কোয়ান্টাম থেকে প্রত্যেক রক্তদাতাকে ৫টি রোগের টেস্ট রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে।'
রক্তদাতা তরুণদের উদ্দেশ্যে শান্ত বলেন, '২০০০ সালের পরে জন্ম নেয়া তরুণরা কিন্তু পূর্বের তরুণদের তুলনায় বেশি সক্রিয়, বেশি সচেতন। রক্তদানেও তরুণরা এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। আজকের ব্লাড ক্যাম্পেও তরুণরা এগিয়ে এসেছে। যাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৯ থেকে ২৬ বছর।'
কোয়ান্টাম ব্লাড ক্যাম্পের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার তুহিন দাস টিটো জানান, দিনব্যাপী এই ব্লাড ক্যাম্পে দেড় শতাধিক তরুণ রক্ত দান করেন। এজন্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
কোয়ান্টাম ব্লাড ক্যাম্পের কো-অর্ডিনেটর শেখ মোহাম্মদ ফয়সল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, 'ব্লাড ক্যাম্পের যৌথ এমন আয়োজনের ফলে অসংখ্য মুমূর্ষ রোগীকে সেবার সুযোগ পাচ্ছি আমরা। এজন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, তরুণদের হাত ধরেই আমরা একসময় আমাদের দেশের রক্তের অভাব পুরোপুরি মেটাতে পারব।'