গ্রাম উন্নতি হলেই গোটা দেশ জেগে উঠবে

 প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩২ পূর্বাহ্ন   |   মতামত

গ্রাম উন্নতি হলেই গোটা দেশ জেগে উঠবে

মজিবুর রহমান :


এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব কটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট, মেডিকেলের অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী গ্রাম থেকেই এসে স্থান পায়। আমার অভিজ্ঞতায় যতটা জানি, বিসিএস মেধায় চাকুরি পাওয়া বড় বড় কর্মকর্তাদের রুট কিন্তু গ্রাম। সুতরাং গ্রামের পরিচয়কে মর্যাদা ও অহংকারের সাথে প্রকাশ করার মধ্যে কোনো লাজ্জাবোধ থাকার কথা নয়।


১৯৮৫ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যখন ক্লাস শুরু হয় তখন কেনো জানি মনে হতে থাকে আমি একাই গ্রাম থেকে এসেছি। অন্যরা সবাই শহরের। একা নীরবে বসে সময় কাটাতাম বেশি। পরে সবার সাথে আস্তে আস্তে পরিচয় হওয়ার পর বুঝেছি, মুটামুটি সবাই (দুই একজন বাদে) প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে এখানে ভর্তি হয়েছে। হলে উঠে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। জানতে পারি কারো গ্রামের বাড়ি রংপুর-দিনাজপুর, কারো জামালপুর-ময়মনসিংহ, কারো কুমিল্লা- নোয়াখালী, কারো যশোর-খুলনা কারো বা বরিশাল-পটুয়াখালী অথবা সিলেট- চট্টগ্রামের কোনো অজ পাড়াগাঁয়ে। বলা যায়, গোটা বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার একটা সমন্বিত পরিবারের আদলে হলে থেকে ভার্সিটি লাইফ শেষ করেছি।


কিছুদিন আগেও আমার এক ভাগ্নের সাথে দেখা করার জন্য গিয়েছিলাম ঢাকা ভার্সিটির  সূর্যসেন হলে। সেখানে গিয়ে দেখি শুধু একটি কক্ষে ওরা প্রায় আঠারো জনের মতো গাদাগাদি করে থাকে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারি ওরা সবাই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছে এবং মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। আমার কাছে মনে হয় খুব বিত্তশালী নয়, এমন পরিবারের সন্তানেরা আর্থিক ও মানসিক চাপে থাকে বেশি , ফলে স্বাধীন পরিবেশে নিজ চেষ্টায় নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারে অনায়াসে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে তুলনামূলকভাবে খরচ কম এবং ভবিষ্যৎ ভালো, এ  ভাবনাতেও তারা এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সফল হয়। শহরের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা বেশিরভাগই বিদেশে পড়াশোনা করাকে প্রাধান্য দেয় এবং বিদেশে না হওয়া পর্যন্ত বেসরকারি বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। অনেকে অবশ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বুয়েট মেডিকেলেও পড়াশোনা করে, তবে সে সংখ্যাটা তুলনায় কম।


দুঃখের বিষয় হলো ছাত্র জীবনে কিংবা কর্মজীবনে গ্রাম থেকে উঠে আসা কেউ কেউ এতটা স্মার্ট হয়ে উঠেন যে, তারা গ্রামের পরিচয় দিতেই লজ্জাবোধ করেন। বিশেষ করে যারা হঠাৎ অগাধ সম্পদের মালিক হয়ে যান, তারা মাঝে মাঝে এমন আচরণ করেন যে, এই মাটির ধরার বাইরে অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছেন। মনে রাখতে হবে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সবার মূল শেকড় কিন্তু গ্রামে। আর গ্রামের কৃষকের ঘামে ভেজা ফসল দিয়েই কিন্তু সবার জীবন বাঁচে। সুতরাং গ্রামকে অন্তর থেকে ভালোবাসুন, গ্রামের মানুষকে মূল্যায়ন করতে শিখুন। গ্রাম উন্নতি হলেই গোটা দেশ জেগে উঠবে।


মজিবুর রহমান : সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ (১৬তম বিসিএস)