জাবিতে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে কনস্টেবলকে গণপিটুনি, পরে পুলিশে সোর্পদ
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩, ০৮:১৯ অপরাহ্ন | শিক্ষা

মাহমুদুল হাসান (জাবি প্রতিনিধি) :
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে ইভটিজিং এবং যৌন হয়রানির অভিযোগে এক পুলিশ কনস্টেবলকে গণপিটুনি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রবিবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, নিরাপত্তা শাখা এবং আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ও এএসপির (সার্কেল) উপস্থিতিতে অভিযুক্তকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
অভিযুক্ত ঐ পুলিশ কনস্টেবলের নাম মেহমুদ হারুন(২৫) নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্সের এস এ ফোর্সে কর্মরত, তার বাড়ি সাভার উপজেলায়। তিনি কনস্টেবল ৫৬তম ব্যাচে ট্রেনিং নিয়ে ২০২০ সালের ৫ মার্চ বাংলাদেশ পুলিশে জয়েন করেন।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন রাস্তায় এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেন ঐ পুলিশ কনস্টেবল ও তার সাথে থাকা এক যুবক, তার নাম বিদ্যুৎ চৌধুরী। এ সময় ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী তার মীর মশাররফ হোসেন হলের বন্ধুদের কল করেন এবং অভিযুক্তদের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন দোকানের সামনে দেখলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং তার বন্ধুরা তাদের ধাওয়া করলে অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন ফটক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় কনস্টেবলের সাথে থাকা একজন পলিয়ে গেলেও ঐ কনস্টেবলকে ধরে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তিতে ঐ কনস্টেবলকে গণপিটুনি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছে তুলে দেয় শিক্ষার্থীরা।'
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, 'রাত দশটার দিকে আমি বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে দিয়ে এমএইচ হলের দিকে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এই দুজন ছাড়া তখন ঐ রোডে কেউ ছিল না। তারা আমার পথরোধ করে পরিচয় জানতে চায়, জিজ্ঞেস করে আমি বহিরাগত কিনা। আমি ভেবেছি ক্যাম্পাসের সিনিয়র হবে, তাই ফরমাল পরিচয় দেই। তাদের পরিচয় দেয়া দেখে বুঝতে পারি তারা ক্যাম্পাসের না।'
তিনি আরো বলেন, 'এরপর আমি হাঁটা দিই। তারা বলে, আপনি জঙ্গলে যাবেন আমার সাথে? এদিক ওদিক জায়গা আছে। আপনি আমাদের সাথে সময় কাটাবেন? দুইজনে আমাকে সামনে পিছনে ঘিরে ধরে। এরমধ্যে একটি খালি রিক্সা সেখানে আসলে আমি রিক্সায় উঠি। রিক্সা টান দিতে বলি। তারা আমার ফোন নাম্বার চায়। রিক্সা থামিয়ে আবার ফোন নাম্বার চায়। তারা রিক্সা থামিয়ে ফোন নাম্বার নেয়ার জন্য জোরাজুরি করে। পরবর্তীতে রিক্সা নিয়ে এমএইচ গেটের সামনে আসলে আমি চিল্লাচিল্লি শুরু করলে তারা দৌড় দেয়। উপস্থিত ছাত্রদের সহযোগিতায় একজনকে ধরতে পারলেও, অন্য একজন পালিয়ে যায়।'
অভিযুক্ত হারুন ঘটনা স্বীকার করে তার সহযোগী সম্পর্কে জানান, "তার নাম বিদ্যুৎ চৌধুরী (২৩)। আমার এলাকার পরিচিত ছোটভাই। সে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বিদ্যুৎ রাজাসনে ভাড়া বাসায় থাকেন। দেশের বাড়ি দিনাজপুর। আগে একটি গার্মেন্টসের আইটি সেক্টরে কাজ করত।"
অভিযুক্ত হারুন আরও বলেন, "আমার ভুল ছিল শুধু আপুর নাম্বার চাওয়া। আর আমার ঐ ছোটভাই আপুকে কু-প্রস্তাব দেয়।" এসময় ঐ পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে একটি নকল ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফ উদ্ধার করা হয়।
এসময় নিরাপত্তা শাখার যোগাযোগের প্রেক্ষিতে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি টিম নিরাপত্তা অফিসে উপস্থিত হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান সুদীপ্ত শাহিন বলেন,‘অভিযুক্ত প্রাথমিকভাবে তার দোষ স্বীকার করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। অভিযুক্তকে আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এস এম এ মওদুদ আহমেদ বলেন, "নিরাপত্তা শাখা খবর পেয়ে অভিযুক্তকে আটক করে। তিনি একজন পুলিশ কনস্টেবল। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়াও আশুলিয়া থানা কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।"
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি অবহিত হয়েছি। সে যা করেছে তা আমাদের পুলিশ বাহিনীর জন্য অসম্মানের। অফ ডিউটিতে থাকাকালীন সে নকল ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফ ব্যবহার করেছে, যা আইনত অবৈধ। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুজু করা ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে সে যেনো সর্বোচ্চ শাস্তি পায় সে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া তদন্ত করে তার সহযোগীকে খুঁজে বের করা হবে।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলকে আটক করতে নিরাপত্তা শাখায় দুই দফায় পুলিশ আসে। প্রথমে রাত প্রায় ১২ টায় ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে (ইন্টিলিজেন্স) প্রধান করে একটি দল নিরাপত্তা শাখায় আসে। এসময় এস আই আফজালের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে নিরাপত্তা অফিসের বাইরে অবস্থানরত শতাধিক শিক্ষার্থী। এর একপর্যায়ে এস আই আফজালের উপর চড়াও হয় শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে সেখান থেকে পুলিশের গাড়িতে করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করানো হয়।
এরপর সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম এবং আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামানসহ আরও একটি টিম অভিযুক্তকে আটক করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা জেনেছি এক সপ্তাহ আগে অভিযুক্ত রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। তিনি মেডিক্যাল লিভ নিয়ে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে এজাহার দায়ের করবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব। এর বাইরে সাব-ইন্সপেক্টর আফজালকে ক্লোজ করা হয়েছে বলে এসপি স্যার জানিয়েছেন।