গ্রীন এন্ড ক্লিন সিটি বানানোর অঙ্গীকার দিয়ে শুরু হলো সিসিক নির্বাচনের ক্যাম্পেইন

 প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ১১:২২ পূর্বাহ্ন   |   মতামত

গ্রীন এন্ড ক্লিন সিটি বানানোর অঙ্গীকার দিয়ে শুরু হলো সিসিক নির্বাচনের  ক্যাম্পেইন

আজিজুল আম্বিয়া, :



বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী , আগামী ২১জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ইভিএমে ভোট হবে । প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩মে, বাছাই ২৫মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১জুন । সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মধ্যে যিনি ছিলেন খুব জনপ্রিয় মেয়র তিনি আর কেউ নন,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মেয়র বদর উদ্দিন কামরান আহমদ ।তিনি দল এবং নিজস্ব ইমেজের জন্য একের অধিক সময়ে মেয়র হতে পেরেছিলেন । যাই ইউক তার হাত থেকে যখন মেয়র পদ হাতছাড়া হয় তখন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হয়ে যান মেয়র। আর তখন থেকে এটি বিএনপির দখলে চলে যায় ।২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে তাই এখানে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরাট ভোট ব্যাংক তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে অনেকে ধারণা করেন। এ কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এ নিয়ে বেশ অসুবিধায় ও আছে বলা যায়। কিন্তু এবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই পছন্দ করেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে এই পদে । আর  এই চৌধুরী যুক্তরাজ্যের  একজন বড় মাপের নেতা। তাই হয়তো তার কর্মী ও সমর্থক অনেকে লন্ডন থেকে দেশে গিয়ে নির্বাচনের প্রচারণায় কাজ করার জন্য অগ্রিম টিকিট বুকিং দিয়ে রাখছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় ।সিসিক নির্বাচন এখন লন্ডন সিলেট টকশো তে পরিণত হয়েছে। তাই এবারের নির্বাচন বিভিন্ন কারণে একটি অর্থবহ নির্বাচন হবে বলে অনেকের ধারণা । অনেকে মনে করছেন এটি আওয়ামী লীগ এর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তাই যেকোন মূল্যে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী এই বিজয় লাভ করবে । বিএনপির হাই কমান্ড থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না থাকাতে এখনো জনগণের মাঝে পরিষ্কার নয় আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে কি থাকছেন? না থাকছেন না । তবুও চলছে বিতর্ক , আরিফুল হক চৌধুরী ইতিমধ্যে মে দিবসের এক অনুষ্ঠানে আনয়ারুজ্জামান কে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনি হলেন বহিরাগত । এদিকে আনয়ারুজ্জামান সেদিন রাতেই মজুমদারি এলাকায় আওয়ামীলীগের এক সভায় তিনি প্রতিউত্তরে বলেন , আমার বাড়ি তো সিলেট শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে আর আমার জন্ম হয়েছে এই সিলেটেই । আরিফুল হক চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে আরও বলেন, ওনার বাড়ি তো কমলগঞ্জে( মৌলভীবাজার)। তাহলে কে বহিরাগত ? তিনি যদি কমলগঞ্জ থেকে সিলেটের মেয়র হতে পারেন,তাহলে আমি সিলেট থেকে কেন সিলেটের মেয়র হতে পারব না ? সব মিলিয়ে যতই সময় যাইতেছে ততই যেন প্রাণ পাইতেছে নির্বাচনী আমেজ। আরও কিছু প্রার্থীদের নাম জানা যায়, এরা হলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট মহানগর শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহর নাম ও শুনা যাচ্ছে । এছাড়া জাতীয় পার্টি সহ একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীও তৎপর। ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান  চৌধুরীর পক্ষ থেকে তারনির্বাচনী অঙ্গীকার এর যে প্রচার করা হচ্ছে , তাতে রয়েছে, নিজস্ব বিদ্যুৎ প্রকল্প , অত্যাধুনিক বর্জ্য ব্যবস্হাপনা, শহর রক্ষা বাঁধ ও সুরমা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি , সিটি করপোরেশনের পরিসেবায় উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন, যানজট মুক্ত শহর এসব মিলিয়ে সিলেট সিটিকে স্মার্ট সিটি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করার মত বিষয় রয়েছে । এছাড়া কেমন সিলেট চাই ? এক অনুষ্ঠানে টিভি উপস্হাপিকার  মাধ্যমে জনগণের প্রশ্নের উত্তরে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, সিলেট সিটিকে তিনি গ্রীন এন্ড ক্লিন সিটি বানাতে চান , এছাড়া তিনি যদি নির্বাচনে জয়লাভ করেন, তবে মাদক সন্ত্রাস, ছিনতাই , ডাকাতি,দুর্নীতি এগুলি জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসবেন। সন্ত্রাস মুক্ত শহর গঠনের লক্ষ্যে সারা শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতাধীন করে নিবেন, নগরের ভিতরের অন্ধকার এলাকা গুলি চিহ্নিত করে লাইটেরব্যবস্হা করবেন, গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নগর বৃত্তির ব্যবস্হা করবেন, প্রবাসীদের জায়গা জমি যদি দখলে আছে জানেন, তবে তা দখলমুক্ত করার কাজে সহযোগিতা করবেন , হকারদের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করে বিদেশের মত সাপ্তাহিক মার্কেটের জন্য সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করে দিবেন, শহরের ট্রাফিক ব্যবস্হার পুনর্গঠন করবেন যাহা ট্রাফিক পুলিস ও জনগণের সমন্বয়ে করা হবে এবং উভয়ের সহযোগিতার মাধ্যমে করা হবে , জনগণের মাঝে গ্রীন শহর করার উৎসাহ বাড়ানোর জন্য ঘোষণা দিবেন, যারা বাড়ির ছাদে বৃক্ষ রোপণ করবেন তাদের জন্য হোল্ডিং চার্জ কমিয়ে নিয়ে আসবেন এ ধরনের ও পরিকল্পনা আছে । এদিকে দৈনিক একাত্তরের কথার মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান জানান , বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন । এসব কিছুর পরেও মানুষ অপেক্ষায় আছে শেষে কি হয় তা দেখতে । আসুন আমরা জেনে নেই দুই প্রার্থী সম্পর্কে সাধারণ জনগণ ও দেশের দুইটি বৃহৎ সংগঠনের কর্মীদের মূল্যায়ন । এক জরিপে দেখা যায়, আনোয়ারজ্জামান চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী উভয়ই নিরহংকারী এবং পরিশ্রমী । কেউ কেউ মনে করছেন মেয়র আরিফ সিলেটে থাকাতে তিনি মানুষের কাছে থেকে সমস্যার সমাধান করেছেন। এছাড়া রাস্তাঘাট প্রশস্ত করার কাজে বেশ দক্ষতা দেখিয়েছেন বলে মানুষের আস্তা আছে তাঁর উপর। কিন্তু তিনি সরকারি দলে না থাকাতে মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই এখন কেউ কেউ তাকে বদলানোর চিন্তা করছেন,আবার কেউ কেউ তাকে আবার ফিরে পেতেও চাইতেছেন। এদিকেআনোয়ারুজ্জামান যদিও দেশে নেই তবুও সিলেট বাসীর জন্য স্পিড ট্রেনের দাবি তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুক্তরাজ্যের এক জনসভায়। এভাবে তিনি সিলেটের মানুষের সাথে রাজনীতিতেও  আছেন সমান তালে । তিনি কঠোর পরিশ্রমী একজন যুবনেতা নেতা ছিলেন। তাই এখনো যুক্তরাজ্যে উনার ইশারায় জমায়েত হয় যুবলীগের হাজার হাজার কর্মী সমর্থক। এটার সাক্ষী প্রধানমন্ত্রী তিনি নিজেই । তাই হয়তো আনোয়ারুজ্জামানের এই মূল্যায়ন। নিজ দলের কর্মীদের মতে, সবাইকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা এবং আন্তরিকতার অভিজ্ঞতায় তিনিই শ্রেষ্ঠ .বলা যায়।তাই আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের সাথে রয়েছে আনোয়ারুজ্জামানের ভালোবাসার বন্ধন। লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে তিনি কাজ করছেন বলে উনার এত সম্মান এটাই ভাবেন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর দলের নেতা কর্মীরা যদি তার পক্ষে কাজ করে তবে কিছু নিরপেক্ষ মানুষের ভোট আছে যারা শহরের উন্নয়ন চান, তাদের ভোট চলে আসবে আনোয়ারুজ্জামানের বাক্সে। তার একটাই কারণ মানুষ জেনে গেছেবর্তমান প্রধানমন্ত্রী উনাকে দিয়েই স্মার্ট সিটির কাজ করাতে চান । আর বিজয় তখন নিশ্চিত না হওয়ার কোন কারণ থাকবে না । কিন্তু প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান এবং তার দলকে মনে রাখতে হবে ঘরের শত্রু বিভীষণ । এদিকে যদি দলের হাইকমান্ড সজাগ থাকে  তবে বিজয়ের  ফল ভোগ করবে আওয়ামী লীগ । পরিশেষে বলতে চাই,আনোয়ারুজ্জামান মত ইয়াং নেতারা যদি ক্ষমতা এবং কাজের মূল্যায়ন দুইটি পান তবে স্মার্ট সিটি বানানো সম্ভব হবে বলে মানুষের ধারণা । আর প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থীকে যদি বিজয়ী করে সিলেটবাসী তবে সিলেটের উন্নয়নের জন্য এটি আশীর্বাদ হবে বলে মনে করেন গুণীজন ।


লেখকঃআজিজুল আম্বিয়া, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।        

মতামত এর আরও খবর: