বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীর বিচার হবে

 প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০২:১৩ অপরাহ্ন   |   রাজধানী

বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীর বিচার হবে

বিয়ের কথাবার্তা চলছিল একটি মেয়ের। তখন মেয়ের পরিবার জানিয়েছিল যে মেয়েটি চাকরি করে। তাকে বিয়ের পরও চাকরি করতে দিতে হবে। ছেলের পরিবার মেনে নিল। মেয়ের পরিবার একটু অসচ্ছল হওয়ায় তার বেতনের টাকাটা পিতার সংসারে দেবে এটিও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে নিল, কারণ ছেলে বেশ ধনী। তার স্ত্রীর বেতন তার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পরই শুরু হল মেয়েটির ওপর মানসিক অত্যাচার। কেন এমন হয় বা আজকাল হরহামেশাই হচ্ছে? ওয়াদার বরখেলাপ, মানবতাবোধের অভাব না অন্য কিছু? এটি নিয়েই আজকের কলাম। বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। দুটি পরিবারের সম্মতিতেই হয়ে থাকে। এখানে বিভিন্ন ধরনের কথা হয়। ছেলেমেয়ের পরিবারের আর্থিক অবস্থা থেকে শুরু করে বংশ কেমন, কয় ভাইবোন, বাবা, ভাইয়েরা কী করে আরও কত ধরনের আলোচনা! বিশেষ করে মেয়ের পরিবার নিয়েই কথাটা বেশি হয়। যা হোক, যে ঘটনাটি দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম সেটার গভীরে তিনটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত ওয়াদা রক্ষা। মেয়ে দেখার পর পাত্রপক্ষের কন্যা পছন্দ হয়। বিয়ের কথা পাকাপাকি হল। ছেলের পরিবার রাজি হয়েছিল যে মেয়ের প্রতি মাসের মাইনেটা তারা গ্রহণ করবে না। তারা অনেক বড় খানদানি পরিবার। বিঘা বিঘা জমি তাদের আছে। শহরেও কয়েকটা ফ্ল্যাট রয়েছে ছেলের নামে। কাজেই স্ত্রীর সামান্য কটা টাকা তাদের কোনো প্রয়োজনই নেই। কিন্তু বিয়ের ৩-৪ মাস পরই মেয়েকে বলা হল আর বাবার বাড়ি বেতনের টাকা পাঠানো যাবে না। স্বামীর সংসারে দিতে হবে। মেয়ের কাছ থেকে টাকা নেয় এ কেমন বাবা? তাহলে কী দাঁড়াল ব্যাপারটা? ছেলেপক্ষ ওয়াদা রক্ষা করল না। এটা খুবই নিচু কাজ। অথচ পবিত্র কালামে পাকে বর্ণিত আছে, ‘এবং প্রতিশ্রুতি পালন কর, প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (১৭ সূরা বনি ইসরাইল : ৩৪)

আজকের সমাজে মানবতাবোধের অভাব। বিয়ের সময় কন্যাপক্ষ কোনো কিছু গোপন না করে সরাসরি বলেছিল মেয়ের বাবার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। মেয়ের আরও ভাইবোন আছে। তাদের পড়ালেখার খরচ মেয়েই চালায়। এটি শোনার পরও তখন ছেলেপক্ষ আপত্তি করেনি। মেয়েপক্ষ ভেবেছিল ছেলে কত উদার মনের। তার পরিবারও খুব ভালো। এটা নিয়ে নিজের আত্মীয়দের কাছে ছেলের বিষয়ে গর্বও করেছিল। বিয়ের ক’মাস পরই ছেলে ও তার পরিবারের আসল রূপ ধরা পড়ল। তাদের ভেতরে মানবতাবোধ নেই। মেয়ের বাবা অসহায় তার উপার্জন ছাড়া, এটি জানার পরও তারা মেয়ের বেতনের আশা ছাড়তে পারেনি। অসচ্ছল মেয়ের পরিবারের প্রতি তাদের কোনো সহানুভূতি হল না। অথচ পবিত্র ইসলাম ধর্মে অসহায় আত্মীয়স্বজনকে সাহায্য করার কথা বলা আছে। ছেলের পরিবার মেয়ের পরিবারের অসহায়ত্বটা দেখতে পারত। ইসলাম মানেই তো ত্যাগ। ছেলেটি শ্বশুরবাড়ির প্রতি ত্যাগ স্বীকার তো করেইনি বরং মেয়েটি যে বাবার জন্য ত্যাগ স্বীকার করছে সেখানে বাধা দিচ্ছে। স্ত্রীর ত্যাগটি কেড়ে নিচ্ছে। এখানে স্বামীর বিবেক অন্ধ হয়ে গেছে। এদের মতো মুসলমানরা অন্ধ, বোবা। তাদের মনুষ্যত্ববোধ নেই। এরা সঠিক পথে সহজে ফিরে আসবে না। এদের কথাই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা বধির, বোবা, অন্ধ ; সুতরাং তারা ফিরবে না।’ ( ২ সূরা বাকারা : ১৮)

মেয়েটিকে প্রতিদিন কথা শোনানো হচ্ছে। তার প্রতি দুর্ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে গেল। তার পিতা কেন টাকা নিচ্ছে এ নিয়ে অশান্তি হল। অথচ মুসলমানের ধর্মই হচ্ছে মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। হাদিসে আছে, ‘যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ সেই প্রকৃত মুসলমান।’ যার যার ব্যবহারের ফল পাওয়া যাবে রোজ কেয়ামতের দিন। কালামে পাকে বর্ণিত আছে, ‘কেয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পুরো করে দেয়া হবে।’ (৩ সূরা আল-ইমরান : ১৮০)

সবশেষে বলছি, যে ঘটনাটির কথা উল্লেখ করলাম এ রকম ঘটনা বহু পরিবারেই ঘটছে। এরা আধুনিক মুসলমান বলে দাবি করে। অথচ আজও মনের নিচুতা দূর করতে পারেনি। হৃদয়ের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পায়নি। সে জন্য আজকাল বিবাহ-বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েছে। বিয়ের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষ বিশেষ করে পাত্রপক্ষ যদি তাদের দেয়া কথা এবং সংসার জীবনে মানবতাবোধ বজায় রাখে তাহলে অশান্তি হয় না। আল্লাহপাক আমাদের সামাজিকতা রক্ষা করার তৌফিক দান করুন।