সাতক্ষীরায় শিশু বৃত্তি পরীক্ষার নামে চলছে শিক্ষা-বাণিজ্য
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন | জেলার খবর
সাতক্ষীরায় বৃত্তি পরীক্ষার নামে চলছে শিক্ষা-বাণিজ্যের অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা, অভিভাবকদের হাহাকারের ভয়াবহ রূপ। প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি।
সাতক্ষীরায় শহরের নামিদামি কোচিং সেন্টারগুলো বৃত্তি পরীক্ষার আড়ালে গড়ে তুলেছে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বা শিক্ষার মান উন্নয়ন নয়, বরং অভিভাবকদের প্রতিযোগিতার মনোভাবকে পুঁজি করেই ফুলে-ফেঁপে উঠছে এই অবৈধ ব্যবসা।
তারা আরও বলেন, দেশের শিক্ষানীতিতে কোচিং সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি দুর্বল। শিক্ষা অফিস ও প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এই অব্যবস্থা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।অভিভাবকদের অভিযোগ প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০টাকা করে ফি নেওয়া হয়েছে, যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। অথচ সেই অর্থের কোনো জবাবদিহি নেই। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এমন বাণিজ্যিক পরীক্ষার আয়োজন করেও আয়োজকরা দেদারসে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সাতক্ষীরা শহরের নবারুন স্কুল প্রাঙ্গণে “বেসিক কোচিং সেন্টার” আয়োজিত “বেসিক বৃত্তি উৎসব-২০২৫” পরীক্ষায় দেখা যায় চরম অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা ও হতাশার চিত্র। সকাল থেকেই ভিড়ে ঠাসা স্কুল প্রাঙ্গণ। প্রায় আড়াই হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীকে একসাথে গাদাগাদি করে বসানো হয়েছে। পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল নেই, পানির ব্যবস্থাও ছিল না। গরম ও ভিড়ে ছোট ছোট শিশুরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।পরীক্ষা শেষে বাইরে অভিভাবকদের মধ্যে সৃষ্টি হয় হাহাকার। কেউ সন্তানকে খুঁজে পাচ্ছেন না, কেউ স্কুলগেটের বাইরে ঠাসাঠাসি ভিড়ে বাচ্চার নাম ধরে ডাকছেন।
এক মা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “আমার মেয়েটাকে পাচ্ছিলাম না প্রায় আধাঘণ্টা। ভিড়ের মধ্যে ওর কান্না শুনে খুঁজে পেলাম। এই অব্যবস্থাপনা যদি স্কুলে হয়, তাহলে আমরা কোথায় নিরাপদ? তাদের বক্তব্য “শিক্ষাকে ব্যবসায় নয়মানবিকতা, সৃজনশীলতা ও নিরাপত্তার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে এখনই। শিশুদের কান্না যেন আর কোনো পরীক্ষার প্রাঙ্গণে না শোনা যায়।
অভিভাবক গোলাম সাকলাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটা শিক্ষা নয়, সরাসরি বাণিজ্য। শত শত শিশু একত্রে পরীক্ষা দিচ্ছে, কোন সুরক্ষা বা তদারকি নেই। শুধুই টাকার লেনদেন। অভিভাবকদের আবেগের ওপর নির্ভর করে এসব কোচিং সেন্টার এখন কোটি টাকার ব্যবসা করছে।তারা বলেন, মুখস্থবিদ্যা নির্ভর পরীক্ষার সংস্কৃতি শিশুদের মধ্যে ভয়, উদ্বেগ আর মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। বৃত্তির নামে এই প্রতিযোগিতা বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক ধরনের মানসিক অবসাদে ভুগবে।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক শিক্ষা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও শহরের বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এখনো সেই ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বৃত্তির নামে অর্থ উপার্জনের খেলায় মেতে আছে।
এই ঘটনায় শিক্ষামহলে প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসনের নজরদারি কোথায়? শিশুদের কান্না আর বিশৃঙ্খলা কি দেখার কেউ নেই? কোচিং বানিজ্য রুখবে কে ?
