লালমাইয়ে বস্তায় আদা চাষে সফলতা দেখছেন কৃষক

 প্রকাশ: ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ

লালমাইয়ে বস্তায় আদা চাষে সফলতা দেখছেন কৃষক


লালমাই (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: 

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম অশ্বথতলা গ্রামের হোমিও চিকিৎসক শাহ আলম নিজের বাড়ির আঙ্গিনা, বাঁশতলা ও পুকুরপাড়ে ২ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। ১০ মাসের এই ফসলে তার খরচ মাত্র ৩০ হাজার টাকা হলেও লাভ হবে কমপক্ষে সাড়ে ৪লাখ থেকে ৫লাখ টাকা। পতিত জমিতে এই পদ্ধতিতে লাভজনক হওয়ায় বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে প্রবেশ পথের দুই পাশে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে বস্তায় রোপন করা আদা গাছ। পুকুর পাড়ে, বাঁশতলায় ও বাড়ির আঙ্গিনায় বস্তায় চাষ করা আদা গাছ সজীবতা ছড়াচ্ছে। পুরো বাড়িই যেন ফলজ, বনজ ও সবজির সবুজায়ন।

সম্ভাব্য ফলনের পরিমান জানতে বুধবার সকালে স্থানীয় উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল মান্নান মোল্লার উপস্থিতিতে কৃষক শাহ আলম একটি বস্তায় মাটি খুঁড়ে আদা বের করেন। ১৪টি আদা গাছ থাকা ওই বস্তায় প্রায় এক কেজি কাঁচা আদা পাওয়া যায়। বস্তা প্রতি ফলনের পরিমানে কৃষককে সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।   কৃষক শাহ আলম জানান, লালমাই উপজেলা কৃষি অফিসারের (সাবেক) কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে বস্তায় আদা চাষে উদ্ভুদ্ধ করেন। আমি সেই আলোকে যে জায়গাগুলো আমার কাজে লাগে না সেই জায়গাগুলোতে ২ হাজার বস্তায় আদা চাষ শুরু করি। এখানে আমার আনুমানিক খরচ হবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আদা এক বছর আগে লাগিয়েছি। আদা ভালো ফলন আসছে। এক কেজির মতো আসছে প্রতি বস্তায়। প্রথমবার লাগানোতে আমার কিছু ত্রুটি ছিল। আমি একটা করে বীজ দেওয়ার কারনে ফলনটা এক কেজি আসছে। আমি চারটা করে বীজ দিলে ফলন দুই কেজির বেশি আশা করতাম। এই দুই হাজার বস্তায় প্রায় ২ মে:টন আদা হবে। এবছর আমি আরো ৫ হাজার বস্তার পরিকল্পনা নিছি। আশা করি মাটি, গোবরসহ সকল কিছু সংগ্রহ করবো। আমি এবছরের ফলন থেকে বীজ সংগ্রহ করবো এবং সারাদেশে আমার বীজ ছড়িয়ে দেবো।

কৃষক শাহ আলমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম শেলি বলেন, আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় সকল ধরনের ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। কোন সবজি আমরা বাজার থেকে কিনিনা। বাড়ির আঙ্গিনায় বিশেষ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করি। গত বছরের এপ্রিলে আমার স্বামী ঠাকুরগাঁও থেকে ১৫ হাজার টাকায় আদার বীজগুলো এনে ২ হাজার বস্তায় রোপন করেছেন। তিনি পেশায় একজন হোমিও চিকিৎসক। প্রতিদিন সকালে চেম্বারে যাওয়ার আগে তিনি এক ঘন্টা কৃষি কাজ করেন। তাঁর পাশাপাশি আমিও প্রতিদিন আদা গাছের পরিচর্যা করি।

লালমাই উপজেলা উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল মান্নান মোল্লা বলেন, বস্তায় আদা চাষ অনেক বেশি লাভজনক। ছায়াযুক্ত স্থান যেমন রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে, যেখানে অন্য কোন ফসল আবাদ হচ্ছে না, সেসমস্ত জায়গায় আদা ও হলুদ চাষ করে দেশের চাহিদা মিটানো সম্ভব। এভাবে যদি প্রত্যেক কৃষককে উদ্ভুদ্ধ করে প্রতি বাড়িতে ৫ থেকে ১০ বস্তায় চাষ করাতে পারি, প্রত্যেক কৃষক পর্যায়ে চাষ করে তাহলে বিদেশ থেকে আর আদা আমদানির প্রয়োজন হবে না। বস্তায় আদা চাষ করলে রোগ ব্যাধি কম হয়, পোকার আক্রমনও কম হয়। নিয়মিত পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। অন্যান্য ফসল যেমন রৌদ্র লাগে, সার-মসল্লা লাগে। আদা চাষে তেমন কিছু লাগে না। দোআঁশ মাটি, কিছু ছাই ও কিছু জৈব সার মিশ্রন করে বস্তায় চাষ করা যায়। প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম দুই চোখ বিশিষ্ট আদা রোপন করলে, প্রতি বস্তায় দেড় থেকে দুই কেজি আদা উৎপাদন হয়।লালমাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আউলিয়া খাতুন বলেন, আদা চাষে খুব বেশি খরচ নেই। ডা: শাহ আলম সাহেবের খরচ হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ওনি প্রায় ৫লাখ টাকার মতো আয় করতে পারবেন। আমরা আশা করতেছি এটা একটা লাভজনক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কেউ আদা চাষ করলে তিনি সফল হবেন।

সারাদেশ এর আরও খবর: