ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনার কতিপয় নীতি

 প্রকাশ: ২৭ অগাস্ট ২০২২, ০৩:০০ অপরাহ্ন   |   মতামত

ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনার কতিপয় নীতি

মোঃ হাসান আলী:

আমরা কীভাবে আর্থিকভাবে সফল হতে পারি তা নিয়ে নিয়মিত সংগ্রাম করতে থাকি। শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন ও তা ধরে রাখার ক্ষেত্রেই নয় বরং এটি কীভাবে আমাদের জন্য কাজ করে তা নিয়েও চিন্তিত থাকি।


ক) খরচ কমানো:

একজন  ব্যক্তি যে পরিমাণে অর্থ  উপার্জন করে তার চেয়ে কম পরিমাণ  খরচ করা শুরু করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে পারে:


১। বাজেট তৈরি করা ও যতবার সম্ভব তা সংশোধন করা:


বাজেট তৈরি করা একটি নিয়মিত কাজ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বেশির ভাগ মানুষের কাছে যে বাজেট থাকে তা সাধারণত তাদের মনে মনেই থাকে। তাদের কাছে এটি কাগজে বা অন্য কোন উপায়ে লিপিবদ্ধ থাকে না।

ব্যক্তিগত আর্থিক সাফল্যের যাত্রা শুরু করার জন্য, আয়-ব্যয়, প্রয়োজন ও ইচ্ছা ইত্যাদি লিখে রাখা ভালো যাতে আপনি আপনার অর্থের ব্যবহার সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেতে পারেন।

আপনি তালিকা হিসাবে আপনার ফোনে আপনার বাজেট রাখতে পারেন অথবা আপনার বাজেটে সহায়তা করার জন্য গুগল প্লে স্টোর সংরক্ষিত বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে থেকে ভালো রেটিংযুক্ত যেকোনো একটি অ্যাপস্ ডাউনলোড করতে পারেন।

একটি বাজেট থাকার অর্থ হলো আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার কাছে কত টাকা আছে, আপনি এটি কোন খাতে ব্যয় করেন এবং আপনি কীভাবে কিছু অপ্রয়োজনীয়  ব্যয় কমাতে পারেন।


২। ঋণ ব্যবস্হাপনা:

অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন কারণে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। যদিও অনেক মানুষ ঋণ থেকে দূরে থাকতে চান না বা পারেন না। তবে ঋণমুক্ত হওয়ার একমাত্র উপায় হলো আপনার ঋণ পরিশোধ করা। আপনি যত দ্রুত এটি করতে পারবেন ততই ভালো। ঋণ দ্রুত পরিশোধ করার অর্থ হলো যে আপনি দ্রুত আপনার অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন।

ঋণের আকারের উপর নির্ভর করে, কেউ এক-দফা অর্থ প্রদান করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।  অথবা এটি করার শর্তাবলীতে ঋণদাতার সাথে সম্মত হতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিত করবে যে দেনাদার ঋণমুক্ত হবেন। এই প্রক্রিয়ায় সঞ্চয়ের জন্য কিছু অর্থ থাকবে।

ঋণের মতো জরুরী পরিস্থিতি যখন আঘাত করে তখন কখনই তা অপেক্ষা করে না। তাই জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিকল্প পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।


৩। জরুরী পরিকল্পনা:


বাস্তবতা হলো যদি কোনো জরুরী পরিস্হিতির সৃষ্টি হয় এবং আপনার কোন বিকল্প পরিকল্পনা না থাকে, তবে তা মোকাবিলা করতে গিয়ে আপনি ঋণগ্রস্হ হয়ে পড়বেন।

দুঃখজনক হলেও এটি সত্য যে, জরুরী পরিস্থিতি জীবনের একটি অংশ। আপনি যদি তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত না হন, তাহলে এমন পরিস্থিতিতে আপনার অর্থ এবং অন্যান্য সম্পদের অপচয় হতে পারে।

অর্থ ব্যবস্হাপনার নীতি অনুযায়ী জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সময় জরুরি তহবিল প্রস্তুত রাখতে হয়। জরুরী তহবিল আপনাকে আপনার সামনে আসা যেকোনো অপ্রত্যাশিত ব্যয় মিটাতে সহায়তা করবে।

আর্থিক উপদেষ্টারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে একটি আদর্শ জরুরী তহবিলে কমপক্ষে তিন থেকে ছয় মাসের জীবনযাত্রার ব্যয় থাকা উচিত। তবে বাস্তবতা হলো এত বেশি অর্থ বাঁচাতে বেশ সময় লাগে। বাজেটের মাধ্যমে আপনি একটি পরিকল্পনা করতে পারবেন ও সেই আদর্শ পরিমাণে পৌঁছানোর জন্য কিছু অর্থ আলাদা করে রাখতে পারবেন।

এটি শুরু করার জন্য আপনি একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারেন যা আপনাকে ভাল মুনাফা দিবে। আপনি প্রতি মাসে যতটা সম্ভব একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ জমা করতে পারেন।


খ) অর্থ উপার্জন করা যা আপনার জন্য কাজ করবেঃ

নিম্নোক্ত নীতিগুলি বিবেচনা করলে আপনার উপার্জিত আপনার জন্য কাজ করবে:


১। ঋণের ইতিহাস নির্মাণ:

ঋণ গ্রহণ করেন বা না করেন ঋণের ইতিহাস আপনার বিভিন্ন  আর্থিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। আপনি আপনার ঋণ সীমার সর্বোচ্চ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। যত দ্রুত সম্ভব পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করে দিন। ঋণের ইতিহাস কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে তা আপনার জন্য কাজ করে? উত্তর হলো ধরে নিন, আপনি কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পড়েছেন এবং ঋণের প্রয়োজন তখন এই ঋণের ইতিহাসই আপনার দ্রুত ঋণ পেতে সহায়তা করবে। তাই আপনার নিজের সুবিধার জন্যই আপনি এই নীতিটি মেনে চলুন।


২। আয় বৃদ্ধি করা:

আয় বৃদ্ধি করা হলো আরেকটি উপায় যা আপনার অর্থকে আপনার জন্য কাজ করতে দিবে। অর্থোপার্জনের সর্বোত্তম উপায় হলো আয়ের চক্রবৃদ্ধিকরণ যা আরও অর্থ উপার্জন ও তা সঞ্চয় করতে সহায়তা করে।

আপনি যদি চান আপনার উপার্জিত অর্থ আপনার জন্য কাজ করুক তাহলে এমন উপায়ে বিনিয়োগ করার কথা বিবেচনা করুন যা আপনাকে এটি করতে সক্ষম করে।

চাকরির ক্ষেত্রে আপনি আপনার বেতন বাড়াতে আলোচনা করতে পারেন, একটি ভাল বেতনের চাকরি খুঁজে পেতে পারেন, ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন কিংবা চাকরির পাশাপাশি একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আর এভাবেই আপনি আপনার অর্থকে আপনার জন্য কাজ করাতে পারেন এবং আপনি এটির মাস্টার হয়ে উঠতে পারেন।


৩। লক্ষ্য নির্ধারণ:

আপনি কিভাবে আপনার সাফল্য পরিমাপ করবেন? এটি প্রায় করতে হবে যদি না আপনি লক্ষ্য নির্ধারণ করেন যা আপনাকে সময়ের সাথে সাথে আপনি যে মাইলফলকগুলি অতিক্রম করতে চান তা অর্জন করতে সক্ষম করে। লক্ষ্য নির্ধারণ করাও একটি দুর্দান্ত প্রেরণা যা আপনাকে আপনার আর্থিক সুস্থতার পথে যাত্রা চালিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

যখন অর্থ ব্যবস্থাপনার কথা আসে, তখন আপনার অনুপ্রেরণামূলক উপাদানটি বোঝার চেষ্টা করুন যেমন, তা হতে পারে তাড়াতাড়ি অবসর গ্রহণ, একটি বাড়ি কেনা কিংবা শুধুমাত্র চাপমুক্ত জীবনযাপন করা।

পরিমাপযোগ্য লক্ষ্য স্থির করুন এবং তা অর্জনে কাজ করুন যা আপনার মাইলফলকগুলি অর্জন নিশ্চিত করবে। এটি আপনাকে দেখাবে যে আপনি এখনও লক্ষ্যে আছেন কিনা। লক্ষ্য ছাড়া অর্থ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আপনি সফল হচ্ছেন কি না তা বলা কঠিন।


একবার এই মূল নীতিগুলি আপনার প্রাকটিসে পরিণত হয়ে গেলে, আপনি আপনার লক্ষ্যগুলির জন্য উপযোগী অন্যান্য নীতিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। যা বিনিয়োগের কৌশল থেকে শুরু করে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য যেকোনো কিছু হতে পারে।


মোঃ হাসান আলী, সহকারী অধ্যাপক, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, ঢাকা কমার্স কলেজ, মিরপুর, ঢাকা - ১২১৬