বৈষম্যের স্বীকার বাংলাদেশের ডিএমএফ শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকরা

 প্রকাশ: ২৩ অগাস্ট ২০২৪, ০৪:০৩ অপরাহ্ন   |   মতামত

বৈষম্যের স্বীকার বাংলাদেশের ডিএমএফ শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকরা


বাংলাদেশে বিএমডিসি কতৃক স্বীকৃত চিকিৎসা কোর্সগুলো হলো এমবিবিএস, বিডিএস এবং ডিএমএফ।  প্রথম দুইটি গ্রাজুয়েট এবং ডিএমএফ হচ্ছে ৪ বছরের একটা ডিপ্লোমা কোর্স । এমবিবিএস পড়ানো হয় মেডিকেল কলেজে, বিডিএস ডেন্টাল কলেজে এবং ডিএমএফ পড়ানো হয় ম্যাটস-এ ।


অনেক আগে থেকেই বিএমডিসি এই তিন ক্যাটাগরিতে রেজিঃ দিয়ে আসছে । ডিএমএফ ডিগ্রিধারীরা লিমিটেশন এর মধ্যে প্রেসক্রিপশন করতে পারে যা আইনগত ভাবে বৈধ । সরকারিভাবে মেডিকেলদের নিয়োগ হয়ে উপজেলা থেকে বিলো লেভেলে "উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার" হিসেবে । যারা আপনাদের নিকটস্থ ইউনিয়ন এবং উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে ইমারজেন্সি বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে ১৯৭৫ সাল থেকে।


কিছুদিন আগে আমাদের যৌক্তিক কিছু দাবি নিয়ে আমরা বিএমডিসি  তে যাই যেখানে আমাদের একটি দাবি ছিলো মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট প্রাক্টিশনার থেকে ডিপ্লোমা মেডিকেল প্রাক্টিশনার স্বীকৃতি দিতে হবে । উল্লেখ্য যে, এমবিবিএস দের রেজিঃ দেয় মেডিকেল প্রাক্টিশনার হিসেবে তাদের রেজিঃ শুরু হয় A দিয়ে । এবং ডিএমএফ  ডিগ্রিধারীদের রেজিঃ দেওয়া হতো মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট  প্রাক্টিশনার হিসেবে যা শুরু হতো D দিয়ে।

এখন এমবিবিএস চিকিৎসকরা এটার বিরোধিতা করছে কেনো আমাদের ডিপ্লোমা মেডিকেল প্রাক্টিশনার দেওয়া হলো । অথচ তাদের সাথে এটার কোনো সম্পর্কই নেই । তারা মেডিকেল প্রাক্টিশনার ই আছেন আমরা তাদের স্থান নেই নি ।


আমাদের আরো দাবি ছিল উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করা । আপনারা জেনে অবাক হবেন বাংলাদেশে যতগুলো ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে তাদের সবারই ব্যাচেলর লেভেলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে । শুধুমাত্র এতবছর এমবিবিএস দের বিরোধিতার কারণে আজ পর্যন্ত ডিএমএফ ডিগ্রিধারীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয় নি । হাজার হাজার ছেলে মেয়ের ক্যারিয়ার এই ডিপ্লোমাতে শেষ হয়ে যাচ্ছে । এমবিবিএস চিকিৎসকরা এখনো আমাদের উচ্চ শিক্ষার বিরোধিতা করছে ।


আমাদের দাবীসমূহের ভেতর ছিল শিক্ষা ক্ষেত্রে ভর্তির আবেদন এর যোগ্যতা বৃদ্ধি করা যেখানে ডিএমএফ এ আবেদনে ভর্তি যোগ্যতা এস এস সি ২.৫০ সেটি উন্নতি করে আবেদনের যোগ্যতা এস এস সি এবং এইচ এস সি মিলিয়ে ৮.০০ করা।সেই সাথে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের পাঠদান সমৃদ্ধ করা।


২০১২ সালের পর আমাদের কোনো নিয়োগ দেওয়া হয় নি । সারাদেশে প্রতিবছর সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই কোর্স করে বেকার হয়ে বসে আছে । সরকারি নিয়োগ নেই, প্রাইভেট চাকরীর ও খুব একটা সুযোগ নেই । ৭৩ টা ড্রাগ দিয়ে যে প্রেসক্রিপশন করার অনুমতি আছে সেটা করলেও তারা বিভিন্ন সময় ডিএমএফ দের হয়রানি করেছে ।


আর প্রেসক্রিপশন লেখার অনুমতি নতুন নয়, এই ডিএমএফ কোর্স চালু করার সময় থেকেই ৭৩ টা ড্রাগের উপর ডিএমএফ ডিগ্রিধারীদের প্রেসক্রিপশন করার বৈধ অনুমতি রয়েছে। উপজেলা হাসপাতাল ইউনিয়ন পর্যায়ে তারা ১৯৭৫ সাল থেকে চিকিৎসা দিচ্ছে । এই ক্ষেত্রেও এমবিবিএস রা বিরোধিতা করে ডিএমএফ দের প্রেসক্রিপশন লেখার অধিকার বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে ।


আমাদের দাবি কখনোই মেডিকেল অফিসার হওয়ার  দাবি ছিলো না । তাদের সাথে আমাদের বিরোধ নেই । আমাদের স্বপদে নিয়োগ, উচ্চ শিক্ষা এসব এর দাবি ১০০ ভাগ যৌক্তিক । চিকিৎসা দেওয়ার অধিকার আমরা নতুন চাই নি এটা আমাদের জন্মলগ্ন থেকে আছে । আমাদের কোর্স টাই এরকম । অথচ এমবিবিএস দের ভাষ্যমতে শুধুমাত্র তারাই এই দেশে চিকিৎসা দিবে, 4 বছরের ডিপ্লোমা করা ডিএমএফ রা দিতে পারবে না । ১৯৭৫ সাল থেকে চিকিৎসা দিয়ে আসা একটা প্রফেশন কে স্রেফ তারা ধ্বংস কিরে দিতে চাচ্ছে ।

উচ্চ শিক্ষা, কর্মস্থল আমাদের অধিকার । আমরা চাই সকল বৈষম্য দূর হোক।


বর্তমানে আমাদের  দাবি সমূহ : :


১) অনতিবিলম্বে ১০ম গ্রেডে নিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃজন চাই।

২)উচ্চশিক্ষা চাই।

৩) .অনতিবিলম্বে ৪ বছরের কোর্স বহাল রেখে পূর্বের ন্যায় ১ বছরে ভাতা সহ ইন্টার্নশিপ বহাল চাই

৪) এলাইড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড বাতিল করে "মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ " নামে স্বতন্ত্র বোর্ড চাই।

%) ম্যাটস নাম পরিবর্তন করে ডিপ্লোমা মেডিকেল কলেজ বা ডিপ্লোমা  মেডিকেল ইনস্টিটিউট করা চাই।




মতামত এর আরও খবর: