বিশ্বসেরা ২% বিজ্ঞানীর নথিতে জাবির ৬ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন | শিক্ষা
মাহমুদুল হাসান (জাবি প্রতিনিধি) :
বিশ্বসেরা ২% বিজ্ঞান গবেষকের তালিকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থীর নাম স্থান পেয়েছে।
আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক জন পি এ ইয়োনিডিসের সহযোগিতায় গত ১০ অক্টোবর বিখ্যাত জার্নাল এলসেভিয়ারে এ তালিকা প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞানীর প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়। ওই প্রতিবেদনটি বিজ্ঞানীদের ২২টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র এবং ১৭৬টি উপ-ক্ষেত্রে শ্রেণীবদ্ধ করে মোট ২ লক্ষ জন গবেষককে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই র্যাঙ্কিংয়ের স্কোপাস ইন্ডেক্সড আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে।
তালিকায় স্থান পাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হলেন- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এ.এ. মামুন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ ইব্রাহিম খলিল , ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলোজির অধ্যাপক শামীম কায়সার, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির এবং পাবলিক হেলথ এন্ড ইমফোরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ এ. মামুন।
তালিকায় প্রথমবার নাম আসা পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেকোন কাজের স্বীকৃতি সবসময় আনন্দদায়ক। বিশ্বের প্রায় ৪লাখ গবেষক এবং দেশের ১৪২ জন গবেষকদের মধ্যে নিজের নামটা দেখতে পেয়ে আমি আনন্দিত। সেই সাথে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরতে পেরে গর্ববোধ করছি। তবে আনন্দটা আরও বাড়বে তখন যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গবেষণায় আগ্রহীদের নিয়ে আলাদা রিসার্চ সেল গঠন করবে। গবষেকদের একত্রিত করার মাধ্যমে ভালো গবেষণা কর্ম সম্পাদন করা যাবে যা দেশ ও জাতির জন্য গৌরব বয়ে আনবে।
পরপর দুইবার এ জরিপে নাম আসা অধ্যাপক এ এ মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্লাজমা পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি বিশ্বে খ্যাতিমান।
অধ্যাপক এ এ মামুন বলেন, গবেষকেরা অর্থ-কড়ি চায় না, তারা চায় তাদের কাজের স্বীকৃতি। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এ জরিপে পরপর দুইবার আমার নাম দেখতে পেরে আমি আনন্দিত।
তিনি আরও বলেন, দিনে দিনে আমাদের দেশে গবেষকদের সংখ্যা বাড়ছে যা আমাদের জন্য গর্বের একই সাথে স্বস্তির। আমরা এখন সবার জন্য গবেষণার পরিবেশ তৈরি করে আরো এগিয়ে নিতে চাই।
সেরা গবেষকদের তালিকায় নাম আসায় তিনি বলেন, একজন গবেষক হিসেবে এটি অত্যন্ত আনন্দের খবর। আর বেশি আনন্দ হচ্ছে গতবছরের তুলনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়েছে, এমনকি আমাদের একজন শিক্ষার্থীও এতে রয়েছেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমরা এগিয়ে রয়েছি, সবার জন্য গবেষণার পরিবেশ তৈরি করে আরো এগিয়ে যেতে চাই। আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না।
তরুণ গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ এ মামুন শিক্ষার্থীদের জন্যও গবেষণা অনুদান দাবি করেন এবং বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়আমাকে ডিগ্রী দিচ্ছে, আমার এই র্যাংকিং দিয়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছুটা হলেও তার প্রতিদান দিতে পেরেছি এটা আমার অনেক বড় প্রাপ্তি। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে সারাজীবন সার্ভ করতে চাই। আরেকটা অনুরোধ করতে চাই, যাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ছাত্রদের জন্য গবেষণা অনুদান থাকে। তাহলে আমার মত আরও অনেকেই গবেষণা করবে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ এ মামুন বাংলাদেশে থেকে নাম আসা সেরা ১৪২ জন গবেষকদের তালিকায় তার অবস্থা ৭ম।
এটিতে দুটি ধাপে সেরা গবেষক নির্ধারণ করা হয়। এর একটি হল পুরো পেশাগত জীবনের ওপর আরেকটি শুধু এক বছরের গবেষণা কর্মের ওপর। জাবির এই ৫ জন শিক্ষক ও ১ জন শিক্ষার্থী ২০২১ সালের জন্য সেরা গবেষকদের তালিকায় রয়েছেন।
এদিকে শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষকদের তালিকায় স্থান করে নেয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন জানান ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। শুক্রবার এক অভিনন্দন বার্তায় উপাচার্য বলেন, বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞান গবেষকের তালিকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষক এবং ১ জন শিক্ষার্থী স্থান লাভ করা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্মান ও গৌরবের এবং এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে মোট সেরা গবেষকের সংখ্যা ১৪২ জন যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইন্সটিটিউট অব এপিডেমোলজি, ডিজিজ এন্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) এর ১৬ জন। পাশাপাশি এই তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন শিক্ষক,বুয়েট থেকে ৫ জন শিক্ষক,শাবিপ্রবি থেকে ৫ জন, রুয়েট থেকে ৫ জন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ জন ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেলে ৩ জন শিক্ষক রয়েছেন।

