নজরুল স্মৃতিবিজড়িত বটগাছটি পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার বাইরে
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ১২:১২ অপরাহ্ন | ভিন্ন খবর

ময়মনসিংহের ত্রিশালে কিশোর নজরুল ইসলাম যে বটবৃক্ষের নিচে বসে বাঁশি বাজাতেন, সেই বৃক্ষটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ কবির স্মৃতিবিজড়িত সেই বটবৃক্ষটি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে পড়ে আছে অযত্ন ও অবহেলায়।
শতবর্ষ আগে কিশোর দুখু মিয়া ত্রিশালে এসে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয় দারোগা রফিজউল্লাহ তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ভর্তি করান দরিরামপুর ইংরেজি হাইস্কুলে (বর্তমানে নজরুল একাডেমি)। প্রথমে কাজীর শিমলা এলাকায় দারোগা বাড়িতে থাকলেও পরে তাকে রাখা হয় নামাপাড়ায়। এখানেই শুকনি বিলের পাশে একটি বটগাছে চড়ে বাঁশি বাজাতেন নজরুল। সময়ের পরিক্রমায় সেই গাছটি ‘নজরুল বটবৃক্ষ’ নামে পরিচিতি পায়।
নজরুলপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ১ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই বটতলার পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরের বছর ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের সময় কবির স্মৃতিবিজড়িত বটবৃক্ষ এবং ভিত্তিপ্রস্তরটিকে পরিকল্পিতভাবে আড়াল করে ফেলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সীমানাপ্রাচীরের বাইরে পড়ে থাকা এই ঐতিহাসিক বটগাছটির আশেপাশে এখন বসেছে চায়ের দোকান ও টং দোকানের সারি। নেই কোনো পরিচর্যা বা সংরক্ষণের উদ্যোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কৌশিক আহমেদ শোভন বলেন, “যে বটগাছকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত, সেই বটগাছটি অবহেলায় পড়ে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি জাতীয় কবির স্মৃতির প্রতি অবমাননার শামিল।”
নজরুল গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজের উপ-পরিচালক রাশেদুল আনাম বলেন, “নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত অনেক স্থানই কালের পরিক্রমায় পরিবর্তিত হয়েছে, হারিয়ে গেছে। কিন্তু এই বটগাছটি একমাত্র জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান লিটন বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদী প্রশাসন অত্যন্ত সুকৌশলে বেগম খালেদা জিয়ার উদ্বোধনকৃত ভিত্তিপ্রস্তর ও কবির স্মৃতি চিহ্ন বটগাছটিকে সীমানার বাইরে রেখেছে। বর্তমানে ভিত্তিপ্রস্তর সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তখন বটগাছটিকেও ক্যাম্পাসের ভেতরে আনা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বটগাছের জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। তবে আমরা এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই কবির স্মৃতিবিজড়িত এই গাছটিকে সংরক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”
নজরুলপ্রেমী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও সংস্কৃতিমনা মহলের জোরালো দাবি—যে বটগাছকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম, সেটি যেন অবহেলায় না পড়ে থাকে; বরং সেটিকে যথাযথ মর্যাদা ও স্মৃতি রক্ষার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হোক।