গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা উপেক্ষিত
প্রকাশ: ১১ অগাস্ট ২০২৫, ১২:১৩ অপরাহ্ন | মিডিয়া কর্নার

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী :
দেশে এক ধরনের মব ভায়োলেন্স-এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে দেশের মানুষ উদ্ধিগ্ন ও আতঙ্কিত। যা জুলাই আন্দোলনের পর দেশের জনগণ কোনভাবেই ইহা আশা করে নাই। সম্প্রতিক একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এবং সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে টিআইবি ও নিউজ পেপারস্ ওনার্স এসোসিয়েশন শুধু গভীর উদ্ধেগ শুধু নয় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এই সেদিন গাজীপুরে সন্ত্রাসীরা এক সাংবাদিককে ধাওয়া করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। অথচ এ সকল ঘটনা সরকারের দূর্বলতার প্রতি দেশের সুশীল সমাজ চিন্তিত। মনে রাখা উচিত এ ধরনের ঘটনা ভবিষতের জন্য অশনি সংকেত। তাতে করে এই নৃংশস হত্যাকান্ডে জনমনে বাড়বে আতংক। জননিরাপওা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপওা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়ার জন্য রাজনীতিবিদ ও দেশের নাগরিক সমাজের দাবী। ইতিপূর্বে মব ভায়োলেন্সের ভয়ে বা আতঙ্কে দেশের অনেক সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীকে চাকুরী হারাতে হয়েছে। মূলত: হত্যা মামলার ভয় ও মব সন্ত্রাস এখন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের দমন-পীড়নের এক ধরনের নয়া কৌশল বা হাতিয়ার। কারাগারের বন্দী সাংবাদিকদের জামিন পাওয়ার অধিকার কি নেই? অনেক গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে শত শত ডায়েরী-মামলা রয়েছে। দোহাই লাগে দেশে কোনোভাবেই যেন প্রতিস্রোতের হিংসার উদাহরণ সৃষ্টি করতে দিবেন না। অনেক সময় গণমাধ্যমে সন্ত্রাসীদেরকে উসকে দিতে দেখা যায় । বলে রাখা ভালো সাংবাদিকদের হেনস্তা করা ঠিক নয়। ইহা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের জন্য ক্ষতিকর। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে অনেক সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীদের আজকাল পদে পদে সমস্যায় পরতে হয় ইহা দুঃখজনক। এই ধরনের ঘটনায় শুধু সরকার নয় রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় পাশাপাশি সরকারের জনপ্রিয়তা উপর আঘাত আসে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অফ বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে উদ্ধিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। জুলাই গণ অভ্যুথানের মাধ্যমে একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল যেখানে থাকবে তথ্য ও মত প্রকাশ মুক্ত স্বাধীন চেতনার নূতন বাংলাদেশের স্বপ্ন তা আজ লুন্ঠিত। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের নিরাপত্তা মত প্রকাশের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হবে বলে দেশবাসী এতদিন আশা করেছিল। তবে সংবাদপত্রর স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমে মব ভায়োলেন্সের হুমকি বন্ধ না হলে এক্ষেত্রে দূর্বৃওদের রাজত্বের আগমন ঘটবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেউ যেন সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর ফ্যাসিষ্ট সরকারের ন্যায় জোর করে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেদিকে সরকারসহ সুশীল সমাজ ও রাজনীতিবিদদের সচেতন থাকতে হবে। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত এক বছরে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের সুরক্ষা করেছে বলে দাবী করছেন। সরকার আরও বলছে তারা এ যাবত কোন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয়, প্রশাসনিক বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি বরং সরকারের বিরুদ্ধে ইচ্ছে মত অপপ্রচার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত সম্প্রচারের মুখেও সরকার অসাধারণ সংযম দেখিয়েছে। বর্তমান সরকার স্বচ্ছতা, নিরাপওা ও সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গিকারকদ্ধ এবং এই মৌলিক মূল্যবোধগুলো রক্ষা ও উন্নয়নে সকল পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। বলে রাখা ভাল, আজকাল সমাজে সোশ্যাল মিডিয়া অত্যান্ত গুরুত্ব বহন করছে। এ মিডিয়া এখন সকলের হাঁতে হাঁতে। একজন অতি সাধারণ ব্যক্তি মানুষও ফেসবুক, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে এই প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে মিডিয়া হিসাবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ গ্রহন করছে। সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমান যুগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ মিডিয়াতে যে কেউ চাইলেই অতি সহজে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য যাচাই করে নিজের মতামত গড়ে তুলতে পারে। এখন অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত ন্যায় বিচার পেয়ে আসছে ইহা কম কথা নয়। তাই ইচ্ছে করলে এখন কেউই এ মাধ্যমকে আটকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
এ কথা সত্য যে বিগত সরকার এক শ্রেনীর সাংবাদিক সমাজের মধ্যে দূর্নীতী ও লোভ-লালশা ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের বিবেককে নষ্ট করে দিয়েছিল । বিভক্ত করে দিয়েছিল সাংবাদিক সমাজকে। ধ্বংস করে দিয়েছিল গণমাধ্যমের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। শেখ হাসিনার সরকার প্রথমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রর্বতন করার মাধ্যমে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদেরকে দমন ও বিচার করার ভূমিকা পালন করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার সে কালো আইন কিন্তু এখনও বাতিল করতে সক্ষম হয়ে উঠেনি। তাই আশাকরি দেশের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তাদের নিরাপওার কোন ভাবেই যেন খর্ব করা না হয় সেদিকে সকল পক্ষকে মানবিক ও উদারতার ভূমিকা পালন করার আহব্বান জানাই।
লেখক: মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী, গণমাধ্যমকর্মী