কোথা থেকে এলো এই নেপালের ঝড়!

 প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৩ অপরাহ্ন   |   জাতীয়

কোথা থেকে এলো এই নেপালের ঝড়!


নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে যে বিক্ষোভের সূচনা, তা এখন রূপ নিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনে। গত সপ্তাহে নেপালের সরকার দেশটিতে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, রেডিট ও স্ন্যাপচ্যাটসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে ব্যাপক সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। অন্তত আটজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ।


সরকারের যুক্তি বনাম সমালোচকদের অভিযোগ : 

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সরকার বলছে—এই নতুন নিয়মের লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে করের আওতায় আনা। সরকারের দাবি, বহুবার সতর্ক করার পরও এসব প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন না করায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। গত মাসে মন্ত্রিসভার এক সিদ্ধান্তে কোম্পানিগুলোকে অফিস খোলার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তাছাড়া ১৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের রায়েও কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন করে কর পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু সমালোচকরা মনে করছেন, সরকারের উদ্দেশ্য কেবল রাজস্ব সংগ্রহ নয়—বরং বিরোধিতামূলক কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করাও তাদের উদ্দেশ্য। উদাহরণ হিসেবে টিকটকের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হচ্ছে, যেখানে সরকারের নির্দেশে হাজারো পোস্ট মুছে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।

কখন কার্যকর হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা?

৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতের পর থেকে, নিবন্ধনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমদিকে অনলাইনে ক্ষোভ ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখা গেলেও সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হয়নি। ফলে এই ক্ষোভ ধীরে ধীরে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

কোন কোন অ্যাপ নিবন্ধিত হয়েছে?

ভাইবার, টিকটক, উইটক ও নিম্বাজ নেপালে নিবন্ধিত থাকায় সচল রয়েছে। এছাড়া টেলিগ্রাম ও গ্লোবাল ডায়েরি নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে মেটার মালিকানাধীন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ এখনো নিবন্ধনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এদিকে কিছু প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যে কর দিচ্ছিল, কিন্তু আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন না থাকার কারণে সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে এএনআই জানিয়েছে।

কিভাবে আন্দোলনে রূপ নিল?

‘জেন-জেড’ নাম ব্যবহার করা তরুণ ব্যবহারকারীরা সোমবার সারাদেশে আন্দোলনের ডাক দেয়। প্রচারপত্র ও পোস্টে সংসদ ভবনের কাছে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তরুণ প্রজন্মের অভিযোগ—সরকার একদিকে মুক্ত মতপ্রকাশ রুদ্ধ করছে, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার সংকট সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

শিল্পী-সংস্কৃতি কর্মীদের সংহতি : 

নেপালি শিল্পী, অভিনেতা ও সংগীতশিল্পীরাও আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন। দেশটির জনপ্রিয় অভিনেতা হরিবংশ আচার্য ফেসবুকে লিখেছেন— “আজকের তরুণেরা শুধু ভাবেই না, প্রশ্নও তোলে। কেন এই সড়ক ভেঙে পড়ল? কে দায়ী? এটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়, বরং যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর।”


জাতীয় এর আরও খবর: