আহারে বৃষ্টি আমার : জলে ভেজা সাড়ে তিন হাত স্বদেশ

 প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:০২ অপরাহ্ন   |   সোস্যাল মিডিয়া

আহারে বৃষ্টি আমার : জলে ভেজা সাড়ে তিন হাত স্বদেশ


আহারে বৃষ্টি! কত কান্নার জল মিশলে তবে এমন বৃষ্টি মেলে। আমার শহরে বৃষ্টি মানেই জীবনের কথকতা। মন খারাপ করা বিকেল মানেই বৃষ্টি। বৃষ্টি মানেই পেছনের দিন, ভাললাগার দিন, ভালবাসার দিন। বৃষ্টি মানেই প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে ঘন্টায় ভাড়া করা রিক্সায় সিএন্ডবি রোড কিংবা কালিজিরা ব্রীজ ধরে ঝালকাঠি যাওয়া। বৃষ্টি মানেই আমাদের টিনশেড বাসার টিনের চালে নুপুরের নিক্কন। মানিক, আমি, পার্থদা কিংবা সুশান্তকে নিয়ে মধ্যরাতে পোর্ট রোডে ইলিশ মাছ খোঁজা। লীনূর গলায়, আজি শুভ দিনে পিতার ভবনে অথবা রিয়ার বিমূর্ত এই রাত্রি আমার, পার্থদার  এই রাত না ষদি শেষ হয়। নিদেন পক্ষে দেবু দার,  চরন ধরিতে। বাদলের মতো শ্রোতা মেলা ভার। অনেক বৃষ্টির পরেও তার রুইয়ার পোলের বাড়ী ফিরে যাওয়া- আর আমরা সাত/আটজন মানুষ আমাদের একমাত্র বিছানায় একসাথে শুযে পরা- হ্যা একসাথে। এমন ভাবে পূরুষ এবং নারীরা একসাথে ঘুমাতে পারে- হয়তো অবিশ্বাস্য!! তবে এসব সত্য এবং দিবালোকের মতো। আমরা বৃষ্টির রাগ সঙ্গীতের সাথে  মিশে গিয়ে এক অদ্ভূত ফ্যাকাশে শাদা ধলপহরে আমরা জেগে উঠে পরস্পরের পবিত্র মুখ দর্শন করতাম। অনেকগুলো পুরুষ এবং নারী একসাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে একে অপরকে বিশ্বাস করে এক সাথে এক বিছানায় রাত কাটানো- কোন কঠিন প্রশ্নের মুকোমুখি করেনি কাউকে!! আমরা বৃষ্টিকে বিশ্বাস করেছিলাম এবং আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম কুয়াকাটার জন বিরল সমুদ্র সৈকতে একত্রে অথবা একা। সরকারী ডাকবাংলোর প্রক্ষালন কক্ষ ধন্য হয়েছিলো রিয়ার স্পর্শে। রিয়া অনেকবার সেই প্রক্ষালন পরিচ্ছন্ন করেছিলো গভীর মমতায়। আমরা বৃষ্টি দেখতাম, বৃষ্টির ভালবাসায় অবগাহন করতাম এবং আরিফ বরিশাল এলে আমরা আনন্দে মেতে উঠতাম,  আরিফ তুমুল বৃষ্টির মধ্যে বীথির হাতে বয়েল্ড ডাবল ডিম খেয়ে ওকালতির পাঠ নিতে ছুটতো। বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে আমরা এক শাবনূরের গল্প শুনতাম আরিফের কাছে। আমি আর আরিফ অথবা রেজা- আমাদের মেঘ বালক। যে কিনা মেঘ ভালবেসে বৃষ্টিকে খুঁজতে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। সাগরদীতে আমার শ্বশুরের বাসায় থাকার সময় রেজা আর আমি শেয়ারের রিক্সায় রওনা হতাম।  দুই টাকার নোটের বিখ্যাত ভাংতি নাই শুনে আমি চলে যেতাম আর রেজা নূরিয়া স্কুলের পেছনে। আমাদের টাউন হলের পেছনের বাসায়, রেজা সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার খেয়ে সন্ধ্যায় আবার ফিরে বীথিকে বলতো, বুয়া বাসায় ফিরে এনার্জি লস করে কি লাভ? তাই বাসায় যাই নাই। অবশেষে সে আমাদের ভালবাসায় নষ্ট করে কীর্তনখোলার তীরে, রাতের খাবার খেয়ে এনার্জি নিয়ে বাসায় ফিরতো। আহারে রেজা! কেউ আর এখন আমাদের মাতৃস্নেহে নষ্ট করতে চায় না!!  বৃষ্টির একটা গন্ধ আছে,  সেই গন্ধটা আমার শরীরের রোম কূপে মিলে থাকতো, যখন আমি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মিলু হয়ে রাজা রায় বাহাদুর সড়ক ধরে অনন্তকালের পথ ধরে কীর্তনখোলায় মিশতাম। গন্ধটা সেই যে সন্ধ্যায়  শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেন ধরে খুব বৃষ্টি শেষে তপনদা অথবা রানীদির বাড়ী থেকে কোন এক অজানা ফুল কিংবা আন্দোলনের গন্ধ নিয়ে আমাকে তাড়াতো।  আহারে বৃষ্টি সব ধুয়ে নিয়ে গেলি, সেই সব বান্ধব স্মৃতি, ভালোবাসার মানুষ এবং অনে দূর থেকে দেখা আদম আলী হাজীর কংকাল দেখার মতে ভালবাসার শহর। আমাকে ক্ষমা করো বৃষ্টি, আমি কখনোই তোমার ভালবাসার দাম দিতে পারিনি। আহারে বৃষ্টি, আহারে ভালবাসার মানুষেরা, আহারে সর্ষের তেলের খিচুরীতে তেলে ভাজা ইলিশ অথবা আমার এক টুকরো বৃষ্টি ভেজা সাড়ে তিন হাত ভূমি।


(কানাডা প্রবাশী বিশিষ্ট সাংবাদিক শওকত মিল্টন-এর ফেসবুক পোষ্টের স্মৃতিকথা)


সোস্যাল মিডিয়া এর আরও খবর: